লালমুখোদের তাবেদারি করে আর কতো দিন যে ভারতবর্ষ খাবে কে জানে। এই বদলে ওই করে দাও, “ডেডলাইন
মিস করলে কেন?”, “আর কতো সময় চাই”, “অ্যাম আই অডিবেল?”,
“ক্যান ইউ সি মাই স্ক্রিন?” আরো হাজারো প্রশ্নের জ্বালায় জীবনটা পুরো মিয়ানো মুড়ি হয়ে গেলো। ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে, সোজা গিয়ে মুখে নুড়ো জ্বেলে দি, কিন্তু
কি আর করবো, মাসের শেষে মনটা ভরে যায়। একটা দিনের জন্যে হলেও। যদিও পিছন পিছন এই ই.এম.আই, ক্রেডিট
কার্ড সব লাইন দিয়ে দিয়েছে। তবুও
ওই আর কি। আমি একজন হতভাগ্য আইটি কর্মচারী। কাজের জন্যে সময় দিতে দিতেই প্রাতঃক্রিয়ার ফুরসত আর পাচ্ছি না
বেশ কয়েক মাস ধরে, আর ঈশিতা
তো কোন দুরস্ত। যা হাল তাতে, পারলে পটিটেও ল্যাপটপ ধরায়।
প্রায় দু তিন মাস হলো, ঈশিতার সাথে দেখা করতে পারছি না। রাগ হওয়াটা
খুবই স্বাভাবিক। সেদিন
তো এক প্রকার রেগেই বললো,
-
আমার জন্যে কি পাঁচ মিনিট সময় আছে?”
হাজার কিন্তুর মাঝেই ওয়েবেক্স জয়েন করে, মিউটে রেখে উত্তর দিলাম,
-
আলবাত আছে, বলুন ম্যাডাম কি বলতে চান। আপকা
বান্দা হাজির হ্যায়।
-
বলছি শেষ কবে যে দেখেছি সেটা তো
ক্যালেন্ডারেও দাগ দিতে ভুলে গেছি। আপনার কি দেখা মিলবে আর?
-
সে কি মহারানীর এ কি কথা।
জো হুকুম, কবে কোথায়? আমি হাজির হয়ে যাবো।
-
বাজে কথা বলো না তো। এই সেই কত
কথা। হুঁ...
-
এই রে, মরেছে। তুমি বিশ্বাস করছো
না তো?
-
না করছি না। শেষ কবে যে ফোন
করেছিলে সেটাও মনে নেই।
একবার ওয়েবেক্স চোখ ফেরাতেই দেখলাম হু হু করে গাদা খানেক
জিনিস বুঝিয়ে যাচ্ছে ক্লায়েন্ট। খাবলে
খাবলে ধরার চেষ্টা করে যখন বুঝলাম কিছু হওয়ার না, তখন অন্যদিকে মন দেওয়াই ভালো। ওয়েবেক্সকে
নিজের মতো ছেড়ে আমি মজলাম মানভঞ্জনে।
-
আচ্ছা কি করলে রাগ কমবে বল?
-
কিছু না।
এই কিছুনা এর মতো মারাত্মক উত্তর আর কিছু নেই। বলছে কিছু নেই, কিন্তু রয়েছে অনেক কিছু। মেয়েদের মন বোঝা
বড়ই চাপ। সে যাই হোক, বেশ খানিক তৈলমর্দনের পর কিছু না-এর খোল থেকে বেরিয়ে এলো,
-
আমায় বইমেলা নিয়ে যেতে হবে।
বইমেলার নাম শুনেই আমার শিরায় একটা বিদ্যুতস্রোত বয়ে গেলো।
ইতিমধ্যে ফ্ল্যাশব্যাকে চলছে গড়িয়াহাটের সেই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা। কিন্তু মুখ ফুটে
না আর বলতে পারছি না। ছুটির দিন আর বইমেলা, এর থেকে হয়তো গব্বর সিং-এর নাম নিলেও এতো
ভয় পেতাম না।
এতোক্ষন
পড়ার পর যদি মনে হয় যে আমি বই পড়তে ভালোবাসি না, কিংবা আমার আর ঈশিতার মধ্যে কিছু চলছে
তাহলে বলবো আপনি ৭০% মার্কস পেয়েছেন। বই আমি পড়তে ভালোবাসি, তবে শর্তাবলী প্রযোজ্য।
বই পড়তে তখনই ভালো লাগে যখন সেটা কিন্ডেলের মতো মুঠোবন্দী বা অ্যামাজনের ৪০ শতাংশ খুশি
নিয়ে ঘরে আসে; ভিড় ঠেলে, ১০% শতাংশ খুশি নিয়ে আমি তুষ্ট হতে পারিনা বাপু। তাই বইমেলার
প্রতি সেই অকৃত্রিম ভালবাসাটুকু নেই। কিন্তু সব অনুরোধ তো আর ফেলা যায় না। অন্য সময়ে
হলে হয়তো কোনও সিনেমা হল বা খাওয়ার জায়গায় নিয়ে গিয়ে মানভঞ্জন করে নিতাম, কিন্তু এখানে
ব্যাপারটা একটু আলাদা। একে অনেকদিন কথাবার্তা হয়নি তার ওপর এবারে বইমেলা যাওয়াটা কিছুটা
বাধ্যতামূলক ছিলই। তাই আর ফেলতে পারলাম না ওর কথাটা, বিশেষ করে সুন্দরী মেয়ে হলে তো
আরোই ফেলা যায় না। অনুমান সত্যি, ব্যাপারটা জমছে। অগত্যা চাঁদ সওদাগরের মনসা পুজোর
মতো আমি হাজির হলাম এক্সাইডের মোড়ে ভর দুপুরে। তখনো ঈশিতা আসেনি…
প্রায়
১০-১৫ মিনিট দাঁড়ানোর পর ঈশিতা এলো। তিন চার মাসে কতো কি যে বদলে যায় সেটা বুঝতেই পারলাম।
ওর সামনে তো বলতে পারবো না, তাই আপনাদের কানে কানে বলছি, নিশ্চয় ৩-৪ কেজি বাড়িয়েছে।
তবে দেখতে সেই খাসাই আছে। একে চাঁদপানা মুখ তার উপর নীল শালোয়ার; আমার ঘুটিতো প্রথমেই
চেক-মেট। কথায় আছে দিনের শুরুটা দেখলে বোঝা যায় দিন কেমন যাবে, আমি বুঝলাম আজ বেশ চাপ
আছে। মাসের শুরুর দিক তাই ট্যাক্সি চেপেই নিলাম, সোজা ওলা ধরে রওনা হলাম সেন্ট্রাল
পার্কের দিকে।
-
কিরে, কথা বলবি না?
-
থাক না, হয়েছে অনেক।
-
আরে কি থাকবে? এরম বোবার মতো বসে বসে যাওয়া যায় নাকি?
-
এটা লাস্ট দু মাসে একবার মনে পড়েনি?
-
আরে না না, সে আবার হয় নাকি? তুই জানিস তো কত চাপে ছিলাম,
তাই আর কি...
-
বললাম তো থাক, হয়েছে... আর ঢাকাই সাক্ষী দিতে হবে না।
-
আরে আর রাগ করে না... শোন
-
আমার ভালো লাগছে না, কেন এই সোজা ব্যাপারগুলো বোঝো না...
আকাশে মেঘ ঘনাচ্ছে, সাথে বৃষ্টির আন্দাজ করেই আমি জোরে হাওয়া চালাতে লাগলাম,
যাতে মেঘ কেটে যায়। ওদিকে গাড়ির ড্রাইভার দেখি মুচকি মুচকি হাসছে। ইচ্ছা করছে গিয়ে
এক দিয়ে দি, কিন্তু বেশি কিছু করার সাহস পেলাম না। মনে মনে ভাবলাম শালাকে ১ রেটিং
দিয়ে আচ্ছা মজা দেখাবো।
বেশ কিছুক্ষন হাওয়া চালানোর পর মেঘ একটু কাটতেই আমি ঝোপ বুঝে কোপটা মারলাম।
টুক করে কানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “বই এর লিস্ট বানিয়েছিস নাকি?” বই যে
ঈশিতার দুর্বলতা সেটা আমার জানা কোশ্চেন। তাই কমন প্রশ্নে দাবিয়ে না লিখলে আর কখন
লিখবো। বইয়ের কথা শুনেই মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, আমারও চাপ কমেছে। ঝট করে ফোন ঘেঁটে
দেখলাম একটা লিস্ট বেরোল, প্রায় গোটা আট-দশ নাম, সাথে আবার স্টল নাম্বারও লেখা।
এরম ব্যপ্তি দেখে বুঝে গেলাম কিরম হাঁড়ির হাল হতে চলেছে, মনে মনে ভগবানকে ডাকতে
লাগলাম আবার যেন আর একটা গড়িয়াহাট কেস না হয়। সামসুর রহমান, পাবলো নেরুদা, ড্যান
ব্রাউন, আরো কিছু নামযাদা লেখকের বইয়ের সাথে সাথে লিস্টে একদম শেষে দেখি
‘হায়ারোগ্লিফের দেশে’। নামটা দেখে আমি বেশ অবাকই হলাম; কারণ, এটা একটা কারন আমার
বইমেলা যাওয়ার আর দ্বিতীয় হলো ঈশিতার ইতিহাস এতো পছন্দ সেটা আমি জানতাম না। তাই আরো
একটা কমন গ্রাউন্ড পাওয়া গেল, মানে হাফ ভলিতে বল; শুধু ছয় মারার অপেক্ষা। কোনো রকম
দ্বিধা না করেই সোজা জিজ্ঞাসা করলাম,
-
তোর ইতিহাস ভালো লাগে? আগে বলিস নি তো...
-
বলবো কখন, তার জন্যে তো কথা বলতে হবে। সেই সময় আছে...
-
আরে বল না...
-
তুমি শোননি এই ‘হায়ারোগ্লিফের দেশে’ বইটার কথা?
-
হ্যাঁ, শুনেছি তো। আর আমি কিনবোও হয়তো এই বইটা।
-
ওহ, ওয়াও। ভালো ব্যাপার তো...
-
আসলে ওটা আমার এক বন্ধুর দাদার লেখা, আর আমার বন্ধুও এই
বইটার ডিজাইন করেছে। বেশ অনেক ছবিও এঁকেছে। তাই এই বইটা কিনবো আমি। আর ওদের আরো
একটা বই এসেছে ‘আদতে আনাড়ি’ সেটাও কিনবো ভেবে রেখেছি।
-
ওহ গড। তোমার বন্ধু কাজ করেছে আর তুমিই আমায় জানাও নি?
-
আরে মানে আমি বুঝবো কি করে তোর এই বইটা ভালো লাগবে... মানে
তাই আর কি...
-
সেই... কি করেই বা বুঝবে...!!! আমি যে বেঁচে আছি সে কথা তো
তোমার মনেই নেই...
-
এই, এসব কি কথা। এরমভাবে বললে আমার ভালো লাগে?
-
বাদ দাও... বলছি এই ‘আদতে আনাড়ি’ বইটা আসলে কি নিয়ে? কিছু
জানো?
-
বিশেষ কিছু জানি না, ওই শুনেছিলাম কিছু ভালো ভালো অন্য
স্বাদের গল্পের কালেকশান একটা। এরকমই তো সৌমিক বলছিল। এর থেকে বেশি কিছু জানা নেই
আর।
-
আচ্ছা। তুমি জানো ‘হায়রোগ্লিফের দেশে’ লাস্ট কদিনের বইমেলার
বেস্ট সেলার।
-
ও বাবা, এরম ব্যাপার নাকি? কিছু বলল না তো সৌমিক...
-
তুমি অনির্বান ঘোষকে চেনো?
-
হ্যাঁ, ‘হায়ারোগ্লিফের দেশে’-এর লেখক তো...!! হ্যাঁ চিনি
তো, সৌমিকের দাদা তো। মানে নাম জানা চিনি, কখনো কথা বলিনি বা দেখিনি।
-
বাঃ, আমার জন্যে তাহলে সই জোগাড় করে দিতে হবে...
-
আচ্ছা দেখছি দাঁড়া।
-
তাহলে তোমার সবার সাথেই কথা বলার সময় আছে আমার সাথে ছাড়া।
বাঃ...
আবার ঝড় ওঠার আগেই মানে মানে সেন্ট্রাল পার্কটা এসে গেল বলেই এই যাত্রায় রক্ষে
পেয়ে গেলাম, বাকি ব্যাপারটা পরে দেখা যাবে।
পুজোর
গড়িয়াহাটের থেকেও খারাপ হল সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলা। বই কিনি না কিনি অন্তত লোক দেখানোর
জন্যে প্রতিবছরই বইমেলা যাই। আগে সপ্তাহের মাঝে যেতাম বলে এই ভিড় পোহাতে হত না, কিন্তু
এখন উইকেন্ড ছাড়া গতি নেই, তাই গুঁতোগুঁতি ছাড়া গতি নেই। বইমেলায় গিয়ে আমি দায়িত্ব
নিয়ে কিছু স্টল এড়িয়ে যাই, তার কারন হলো অমানসিক ভিড় আর কলেজস্ট্রীটে দোকান থাকায় অপেক্ষাকৃত
কম দামে বই কেনা যায় উইদাউট এনি ভিড়। এবারেও সেই মতলবেই ছিলাম কিন্তু ফোনের লিস্ট আমার
কাজে বাধা দিল। ইনিয়ে বিনিয়ে যত ওই দোকানের দিকে যাওয়াটা আটকাচ্ছিলাম ঈশিতার, কিন্তু
জহুরীর চোখতো সেই জহরেই। অগত্যা এসে পড়লাম আনন্দের মুখে। কিন্তু ওরম পাহাড় প্রমান ভিড়ের
মাঝে ঈশিতাকে মানাতে বিশেষ সময় লাগলো না। এক দৌড়ে পথ পালটে এবার এলাম বিদেশি বইয়ের
ডেরায়। সেখানে মোটামুটি লিস্ট মিলিয়ে বই কেন হলো। লক্ষ্য ছিল ৪-৫ টা বই, কিন্তু শেষমেষ
সেটা গিয়ে দাঁড়ালো ৬-৭ টায়, মানে যা হয় আর কি। এই দোকানগুলোতেও দমবন্ধ করা ভিড় আর ভ্যাপসা
একটা গরম, কিন্তু ওই যে প্রথমেই বললাম বিদিশি জিনিসের প্রতি একটা অমোঘ আকর্ষন আমাদের
চিরকালের। সে যাক গে যাক, বইয়ের আবার এদেশ ওদেশ। প্রায় দীর্ঘ এক দেড় ঘন্টার পরে ঈশিতার
মুখে ওই হাসিটা দেখে আমার হাড়ে গজানো দুব্বঘাস গুলোতে একটু বাতাস লাগলো। এবার একটু
খাওয়া যাক।
বইমেলায়
এসে যদি আপনি গোগ্রাসে না খান, কিংবা নিদেনপক্ষে একটা আইসক্রিম, পপকর্ন বা কফিও যদি
না খান তাহলে আপনাকে বাঙালি তকমা দেওয়া নিয়ে আমি ধর্নায় বসবো। যে মেলায় প্রতি ৪টে স্টলের
একটায় অমুক দা, বা তমুকদির চটজলদি পঞ্চাশ রান্নার রেসিপির বই থাকে সেই মেলায় এসে মানুষ
খাবে না… এটাও কি সম্ভব? তাই ওসব না ভেবে আমি সোজা জিজ্ঞেস করলাম ঈশিতাকে,
-
কিরে, চা বা কফি কিছু খাবি?
-
না, আমার যা গরম হচ্ছে ওসব খাবো না।
-
তাহলে রোল বা প্যাটিস?
-
একদম না। কবে কার বাসি জিনিস… ওসব খেতে
হবে না। আর তুমিও খাবে না।
-
আচ্ছা। তাহলে ঠান্ডা কিছু?
-
উমম… সেটা হলে মন্দ হয় না।
-
আচ্ছা দাঁড়া।
এই বলে আমি গিয়ে এক কাপ চা আর একটা চকলেট আইসক্রিম নিয়ে
এসে ঈশিতার হাতে দিলাম। খাওয়া দাওয়া সেরে ভাবলাম ঝট করে সৌমিকের সাথে দেখা করেই বইটা
তুলে বেরিয়ে যাবো। আর যদি অনির্বান ঘোষ থাকে তাহলে একবার দেখা করে নেবে ঈশিতা, তারপরেই
টুক করে বেরিয়ে ম্যান্ডেরিন বা চাওম্যান, সেখানেই না হয় বাকি কুলফিটা জমিয়ে নেব; ঈশিতা
আবার চাইনিজ খেতে ভীষণ ভালোবাসে। এরম ভাবতে ভাবতে ঈশিতাকে বলতে যাবো পরের প্ল্যানটা,
ইতিমধ্যে দেখি উনি লিস্ট দেখে কাটাকুটি করছে। সব হিসাব নিকাশের পর দেখলাম এখনো দুটো
বই বাকি রয়েছে। সেটার পরেই যাওয়া যাবে আমার কাজে।
হাতের
বাকি কাজ সেরে মানে বাকি দুটো বই কিনে আমরা এবার এগিয়ে গেলাম স্টল ৩৩৬ এর কাছে। ঈশিতার
লিস্টে বাকি পড়ে আছে শুধু হায়রোগ্লিফের দেশে। সৌমিকের মুখেই শুনেছিলাম ৩৩৬ এ নাকি পাওয়া
যাচ্ছে হায়রোগ্লিফের দেশে তাই সেই দিকেই গেলাম। গিয়ে বই চাইতেই আমার দিকে দোকানদার
চেয়ে এমন এক হাসি দিল যে নিজেকে কতোটা গাধা ভাববো এটা মেপে উঠতে পারলাম না। শুনলাম
সে বই নাকি দোকানের ঝাঁপ তোলার সাথে সাথেই মার্কেট থেকে হাওয়া। এবার ঈশিতার কথা বিশ্বাস
হলো। এটা শুনে ঈশিতার মুখটা কেমন ভার হয়ে গেল। আর সেটা আমার মোটেই
ভালো ঠেকলো না। পকেট থেকে ফোনটা বের করে একবার সৌমিককে ফোন করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু
এই বইমেলায় ফোন পাওয়াটা সোনার পাথরবাটির মতো ব্যাপার। কি করি, কি করি ভাবতে ভাবতে একবার
মোবাইল খুলে ওয়াটস্যাপটায় চোখ বোলালাম, দেখি সেখানে ৩৩৬ এর সাথে ৪৪৫ এর নামও বলেছিল
সৌমিক। তাই সেখানে গিয়ে দেখলে একবার বিশেষ মন্দ হয় না। এই ভেবেই ঈশিতাকে ভোলানোর জন্যে
নিয়ে পা বাড়ালাম ৪৪৫ এর দিকে।
এসব স্টল
গুলো নিয়ে আমার যা ধারণা ছিল সেটা এই যে, এগুলো এক পাশে পড়ে থাকা, বইমেলার নিম্ন মধ্যবিত্ত
সম্প্রদায়,চোখে বিশেষ আকাঙ্ক্ষা নেই, নেই উচ্চাশা; আর উচ্চাশা থাকলেও সেটাকে সফল করার
মতো সামর্থ্য বা ব্যপ্তি নেই; শুধু স্রোতে ভাসা গোছের অভিব্যক্তি। সৌমিক না বললে হয়তো
কোনো দিনই এই দিকে এসেই দেখতাম না, ওই নাম করা দোকান গুলোতেই ঘোরাঘুরি করে ফেরার বাস
ধরতাম। কিন্তু সেই দোকানটাই যে আমার দীর্ঘ পনেরো(যবে থেকে বইমেলা আসছি) বছরের বিশ্বাসকে
এভাবে টলিয়ে দেবে সেটা আমি ভাবতে পারিনি। আর তার কারন দুটো, ‘হায়রোগ্লিফের দেশে’ আর
‘আদতে আনাড়ি’। মানে একটা আনন্দের স্টলকে কেটে সমান আটটা ভাগ করে তার একটা ভাগ রাখলে
যতটা জায়গা হয় তার প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে এই ৪৪৫ নম্বর স্টল, আর ভিড় আনন্দের অর্ধেক।
মানে ব্যাপারটা আন্দাজ করা যাচ্ছে কি প্রচন্ড একটা বিশ্রী রকমের। এই স্টলের আশে পাশে
যেন কেউ হিটার জ্বেলে দিয়েছে, এতো গরম। এই চরম মারামারির মাঝেও সৌমিককে খুঁজে পাওয়ার
আশায় সামনে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি মুর্তিমান, আমায় দেখেই সামনে এগিয়ে এসে কিছু কথা
বার্তা বলতে যাবো অমনি পিছন থেকে আপামর জনগনের প্রবল গুঁতোয় সে কথা আর বেশি দূর এগলো
না। মানে মানে একটা হায়রোগ্লিফের দেশ জোগাড় করার পর যখন আর একটা চাইলাম তখন সেই পুরনো
দিনের হিন্দি সিনেমার হিরোর কান্নার সিনের মতো মুখ করে বললো,
-
আর নেই ভাই, এই একটাই ম্যানেজ করলাম।
-
আর আদতে?
-
সে তো কোন সকালে শেষ?
-
শেষ…!!! বলিস কি রে?
-
হ্যাঁ ভাই, আসার আধ ঘন্টার মধ্যেই সব
শেষ। ভাগ্যিস হায়রোগ্লিফটা বেশি করে আনা ছিল, নাহলে কি যে হতো।
-
আরে দারুন তো ভাই। সত্যিই তো এটা বেস্টসেলার
রে।
-
হ্যাঁ।
-
আরে এই হলো ঈশিতা আমার বন্ধু। ওর কথা
শুনেই এটা কিনতে এলাম, নাহলে তো আদতে কিনেই বাড়ি যাওয়ার কথা আমার।
-
যা অবস্থা আমি তোকে পরে ম্যানেজ করতে
পারলে বলবো।
-
আচ্ছা, নাহলে আমি অনলাইন কিনে নেব।
-
ঠিক আছে ভাই।
-
বলছি তোর দাদার সাথে দেখা করা না, হায়রোগ্লিফ
লিখেছেন যিনি।
-
আচ্ছা। আয়।
ওই ভিড় ঠেলে আমি আর ঈশিতা একটু এগোতেই দেখি এক কোনে চেয়ার
পেতে বসে আছেন লেখক অনির্বান ঘোষ, আর এই প্রান ওষ্টাগত ভিড়ের মাঝেও অকাতরে সই বিলিয়ে
যাচ্ছেন সব পাঠক পাঠিকা কুলের মাঝে। আমি সৌমিকের বন্ধু জানতে আরেকটু আদর নিয়ে দু এক
কলম লিখে দিলেন প্রথম পাতায়। কথা বিশেষ বলা হয়নি সেদিন আর সম্ভবও ছিল না। তাই সই নিয়েই
আসতে আসতে বেরিয়ে এলাম ওই ভিড়ের মাঝখান থেকে। চরম গরমের মাঝে দর দর করে ঘামতে থাকা
মুখটা এক নিমেষেই শুকিয়ে গেল ঈশিতার রুমালে। আর না, এবার বাড়ি যাওয়ার পালা।
ঈশিতা
বইটা পায়নি, আমি পেয়েছি; এর মতো অস্বস্তিকর অবস্থা আর কি হতে পারে। একটু অন্যমনস্ক
হতেই টুক করে ওর ব্যাগের মধ্যে বইটা ফেলে দিয়েছি আমি সেটা খেয়ালই করেনি ও। জিজ্ঞেস
করলাম,
-
কি রে কোথায় খেতে যাবি?
-
আজ আর না। প্রচুর বই হয়ে গেছে আর ক্লান্তও
লাগছে, এবার বাড়ি যাই বুঝলে?
-
সেকি রে, খেতে যাবি না?
-
না গো, আজ বাদ দাও। পরে যাবো।
-
আচ্ছা সে ঠিক আছে। তাহলে আমি তোকে বাড়ি
ছেড়ে দিয়ে আসি তাহলে…
-
আরে তুমি আবার এতো কষ্ট করতে যাবে কেন?
আমি ঠিক চলে যাবো।
-
আরে না না। ও কিছু ব্যাপার না।
ওলা করে টুক করে দমদম মেট্রোর কাছে চলে গেলাম। সেন্ট্রাল
পার্ক থেকে দমদম আর কতোক্ষনই বা লাগে। তার পর প্রায় মিনিট দশেক হাঁটার পর ওর বাড়ির
গলির সামনে আসতেই বুঝলাম আর বেশি এগোনটা শোভন হবে না। তাই সেখান থেকে আবার ফেরার পথ
চলা শুরু করতে যাবো, হঠাত পিছন থেকে হাতটা টেনে ঈশিতা বললো,
“ মাঝে মাঝে একটু ফোন করো… নাহলে যে ভীষণ এ… যাক গে যাক
সাবধানে বাড়ি যাও। গিয়ে জানিয়ে দিও…” পুরো কথাটা শেষ না হতে দিয়েই ও জলদি পায়ে এগিয়ে
গেল আমার কাছে প্রশ্ন জমিয়ে রেখে…
মেট্রো ধরে একা বাড়ি ফেরার পথে ওয়াটস্যাপে একটা মেসেজ
লিখে পাঠিয়ে দিলাম, “ হায়রোগ্লিফের দেশ-টা পড়ে বলিস কেমন লাগলো… তার পর আমি পড়বো। আর
ওটা আমার থেকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-গিফট। সাবধানে রাখিস। আর ১৪ তারিখ সন্ধ্যেটা খালি
রাখিস…”
ব্যাপারটা জমে ক্ষীর হলো না কুলফি এটা তো চোদ্দ তারিখেই
বোঝা যাবে, কিন্তু তার আগে দেখি আমিই ওই দিন সন্ধ্যেটা অফিস থেকে আগে বেরোতে পারিকি…
বলা তো যায় না, সবই কপাল…!!!
Visoon valo
ReplyDeleteজিও পাগলা!
ReplyDeleteThank you dada... :-)
Deleteমিষ্টি। 😊
ReplyDeleteAre jerakam movie release er age star ra serial ba reality show gulo promote krte ase tui to sei rakam promote kore felli abar golpo o hye galo misti ekta...besh sundar...
ReplyDelete