Saturday, 29 December 2018

কি শুনতে পাচ্ছেন???





“শিল্টনের হাতেই এবারে মরসুমের প্রথম ডার্বি জয় এলো বাগানে…”

কথাটা শুনে একটা চওড়া হাসি নিয়ে টিভিটা বন্ধ করলাম। ডার্বি, শনিবার বিকাল আর সাথে আকাশের রঙ সবুজ মেরুন এর থেকে আর ভালো কম্বিনেশান কি বা হতে পারে...!!! এখন খেলার পরেই প্রধান কাজ হলো ফেসবুকে ঘুরে আসা, কোথাও কোথাও তুমুল তর্কের আগুন লাগলে একটু করে ঘি ঢালা, তার পরে বাছা বাছা কিছু ছবি নিয়ে সোজা শেয়ার, বা ওয়াটস্যাপ স্টেটাস; ব্যাস আর কি গর্বিত সমর্থকের মতো কাজ শেষ। তবে মনে মনে দুঃখ রয়ে গেল, ‘ইসস কাল যদি অফিসটা থাকতো তাহলে বেশ রগর করা যেত। এই ভাবতে ভাবতেই একবার ফেসবুকে গ্রুপ গুলোয় ঢুঁ মারলাম। দেখলাম রীতিমত ঝামেলা চলছে। কিছু ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের দাবি মোহনবাগান রেফারি কিনেছে, আর সেই কথায় বেশ কড়া রকমের গালাগাল চলছে। এ আর নতুন কি, আমরা মানে বাগানীরাও হেরে গিয়ে সেই এক কাজ করি। কম বেশি সব জায়গার ডার্বি নিয়েই এক রকম ব্যাপার হয়ে থাকে, আর ফুটবল তো আমাদের রক্তে; এসব তো হবেই।

আসল অসুবিধাটা এখানে না, অসুবিধাটা হলো এর পরে। কিছু ম্যাচ জিতে গেলাম, কিছু ম্যাচ হারলাম, লিগ পেলাম না, কিন্তু ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছি এটাই সারা মরসুমের ব্যালেন্স-শিট। না পেতে পেতে, পেতে চাওয়ার অভ্যাসটা আসলে আমরা সমর্থকরা হারিয়ে ফেলেছি। এখন কথা আসতেই পারে এই তো সেদিন জাতীয় লিগ জিতলাম প্রায় তেরো- চোদ্দ বছর পরে, তার পরের বছরেই আবার ফেড-কাপ, এবছরে আবার কলকাতা লিগ পেলাম প্রায় আট বছর পরে; এরপরেও এতো কথা কেন থাকবে? সত্যি সেটা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু দুবার কেন ফিরে এলাম দোরগোড়া থেকে? কে এই আইজল, কে এই মিনার্ভা, তারা কেন এগিয়ে থাকবে আমাদের থেকে? এটার কি কোন উত্তর আছে কর্তা মশাইদের কাছে? এখন যদি প্রসঙ্গ টেনে আনা হয় যে লেসটারও তো লিগ জিতেছিল সেখানে তো সবাই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এখন কেন প্রশ্ন তুলছি? সেই উত্তরে বলবো অঘটন একবার হয়, দু বার হয়। বার বার হয় না। সেখানে মোহনবাগানের মতো দলের লিগ জিততে সময় লাগলো চোদ্দ বছর, কলকাতা লিগ জিততে সময় লাগলো আট বছর। তাহলে মাঝের এতোগুলো বছর কি শুধুই অঘটনই হয়ে চলছিল?

আমরা ভারতীয়রা খুব অদ্ভুত। নিজেদের অপমান সুন্দর গলা ভিজিয়ে গিলে নিতে পারি যদি বাইরের কেউ আমাদের থেকে পাকিস্তান বা বাংলাদেশকে বেশি অপমান করে। ময়দানেও সেই এক হাওয়া, ‘মোহনবাগান কাপ পায়নি তো কি আছে, ওরাও তো পায়নি; আর কলকাতা লিগটা কোনও লিগের পর্যায়ে পড়ে নাকি।’ এসব তো আমাদেরই বানানো কথা পিঠ বাঁচানোর জন্যে, লজ্জা ঢাকার জন্যে। কিন্তু এটা কি আদৌ কাম্য মোহনবাগানের মতো একটা দলের কাছ থেকে? চোখের সামনে তরতরিয়ে বেঙ্গালুরু এফসিকে মাইল খানেক এগিয়ে যাতে দেখেও কি কর্তাদের টনক নড়লো না? কেন নড়লো না? যেহেতু নামটা ইস্টবেঙ্গল না, সেই জন্যে? আর যদি ইস্টবেঙ্গলের কথাও ধরি সেখানেও তো ওদের নামের আগে কিংফিশার বা কোয়েশ(নতুন) জুড়েছে? আমাদের ক্লাবের সাথে তো কিছুই জুড়লো না, সেটার দিকে কি কারো দেখার সময় নেই? এখনো যদি সময় না হয় তাহলে কবে হবে আর?

না আছে ভালো রিক্রুট, না আছে ট্রফি, না আছে ভালো ব্যবস্থা, না আছে কোন তাগিদা; এভাবে কোনোদিন মোহনবাগান খেলেছে? আমি অন্তত এভাবে খেলতে দেখিনি কখনো। এতোদিন ধরে ক্লাবে কোনো স্পনসর নেই, এতোদিন ধরে এক কর্তার বা বলা যায় কিছু কর্তার টাকায় প্লেয়াররা বেতন পেয়েছে। খুব ভালো কথা, কিন্তু সেই ভাঁড়ে আর কতোদিন চলবে? এক সময় তো খুচরো গুলোর আওয়াজ শোনাই যাবে। সেটা জানা সত্ত্বেও কোনও প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে এই ক বছরে কিছু মিথ্যে খবর ছাড়া? নতুন আবার খবর এসেছিল সাড়ে তিনশ কোটি। সেটার সত্যতা যাচাই করতে গিয়েই ভাঁড়ে মা ভবানী। কিছু না পেয়ে চারশো কোটির সাথে পাল্লা দিয়ে সাড়ে তিনশো গচিয়ে দিলেন? না এই সব কিছুর মধ্যে দিয়ে পুরোনো দিনের জমানো কাটমানি গুলোর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করলেন কর্তারা?

ধীরেন দের মোহনবাগান বলত, ‘মোহনবাগানে কোন বিদেশী খেলে না’। নিজের মাটির ছেলেদের ওপর এতোটাই আস্থা ছিল তাঁর। সেই রীতি এখন নেই, সেটা আশা করিও না; কিন্তু ঢাঁক ঢোল পিটিয়ে যে বিদেশিকে বছরের পর বছর আনা হচ্ছে সে তো আসল ম্যাচ খেলছেই না, তাহলে কি লাভ? কারন খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে পেমেন্ট পায় নি বলে খেলবে না। এর থেকে লজ্জার কথা আর কিছু হতে পারে? বছরের পর বছর হতশ্রী বিদেশি, আর ততধিক বাজে দেশি রিক্রুট, যে টিমটাকে একটা একশ ওয়াটের বাল্বের নিচে দাঁড় করিয়ে দিলে হাড় গিলে কঙ্কাল দেখা যাবে। খেলাত চোখে দেখা যায় না এতোটাই বাজে। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে নির্বিকার কর্তারা। বলি এতো নাটক করে, মিথ্যে স্পনসরের গল্প ফেঁদে,   খবরের শিরোনামে এসে তো ভোটটা জিতলেন এবার কি গল্প হলেও সত্যি কিছু হবে? নাকি আবার কপালে আমড়ার আঁটি?

টিমে আগে বাঙালি খেলতো না, এখন সেখানে অনেক বাঙালি দেখতে পাই। কারন বাকিরা বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আই-এস-এলে চলে গেছে। আর যাবে নাই বা কেন? সেখানে পয়সা সেখানে ছোটাই তো প্রবৃত্তি মানুষের, আপনাদেরও তো তাই। এখন যারা খেলছে তাদের খেপের মাঠেও নেবে বলে সন্দেহ আছে।আর এদের দোষ দিয়েই বা কি লাভ ক্যান্টিনে খাবার পাওয়া যায়? একটা জিম আছে? যে মোহনবাগান অ্যাকাডেমির নাম সারা ভারতে ছড়িয়ে ছিল সেখান থেকে আর একটাও সাড়া জাগানো তারকা বেরোচ্ছে না কেন? সেদিকে কখনো খেয়াল করেছেন? খালি ব্যাগ ভরেছেন নিজেদের আর জাতীয় ক্লাবের তকমা গায়ে মেখে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

এতো কথা কেন বললাম জানেন কারন আমরা মোহনবাগানকে ভালোবাসি। মায়ের মতো জায়গায় রাখি মোহনবাগানকে। মাঠের সাথে যোগাযোগ একদম নেই বললে ভুল বলা হয়। মাঠে আমিও নেমে পড়ি সময় পেলেই, কোনো পেশার তাগিদে না, খেলাটার প্রতি ভালোবাসার জন্যে। বললে বিশ্বাস করবেন কি জানি না আমার কাছে এখনো দুটো জার্সি আছে খেলার। এক্ষণ সব রংচঙে বিদেশি ক্লাবের জার্সি পরে খেললেও আমার গায়ে কিন্তু এখনো সেই সবুজ মেরুন। নিজে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভক্ত হয়েও বাড়িতে কখনো ওই জার্সি ঢুকতে দিই নি। কারন আমি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ফ্যান, আর মোহনবাগানের সমর্থক, মোহনবাগান আমার ভালোবাসা। তাই ওই ক্লাবের সাথে সাথে আমাদের এগিয়ে চলাটাও অনেকটা নির্ভর করে। আজাহার একটা দূর থেকে শট নিলে মনে আশা জাগে, ডিকা একটা বাজে মিস করলে রাগে মুখে গালাগাল চলে আসে, সোনির একটা ছোট্ট টাচে হৃদয় নেচে ওঠে আর পিন্টুর ওই উইনিং গোলে এক ঝলক নেচে উঠি আমরাও। এসব গুলোর দিকে যদি এখন না দেখেন তাহলে হয়তো আর কখনো দেখবেনও না। নিজে এখন কাজের সূত্রে বাইরে থাকি, কিন্তু ব্যাগের মধ্যে এখনো দুটো পতাকা ভরা আছে। একটা ভারত মায়ের আর একটা মোহনবাগানের।

কি শুনলেন তো? হ্যাঁ কর্তা মশাই, আপনাদেরই বলছি। ঠিকই বুঝেছেন। এসব গুলো একটু দেখুন নাকি এবার। অনেক তো হলো, একটু নড়ে চড়ে বসুন এবার। আজ তাহলে এখানেই থামলাম। যেতে যেতে একটা কথা বলে দিয়ে যাই, আজ কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ড্র করেছে, আমরা জিতিনি বটে, কিন্তু ওরাও ড্র করেছে। তাই এক পয়েন্ট বেশি পেয়েছে আমাদের থেকে। তাই খুব একটা চিন্তার কিছুই নেই। শুধু মোহনবাগানের লেভেলটা অনেক খানি নেমে গেছে, আগে নিজেরা ট্রফি পেলে খুশি হতাম, এখন ইস্টবেঙ্গল না জেতায় খুশি হই। এই তো, এই যে স্বস্তির হাসি দেখলাম আপনাদের মুখে এটাই তো পাওনা... J

                                                ।। জয় মোহনবাগান ।।





Sunday, 23 December 2018

বদলের পর

বদলে গেছে অনেক কিছু
গলি শহর,রাস্তাগুলো;
বদলে গেছে গানের খাতা,
স্বরলিপি আর নকশি কাঁথা;
বদলে গেছে স্কুলের পথে তোমার আমার সঙ্গে হাঁটা।

খবর নিলাম বছর পরে
কেমন আছো? শরীর কেমন?
চলটা ওঠা চশমার ফ্রেম
এখন ও কি পড়ার ঘরে?
ওষুধ গুলো এখনো কি খাও, বেনিয়মে, নিয়ম করে?

আমি আছি আগের মতোই
একটু বেভুল এবং বেহুঁশ,
ওষুধ গুলো? খাওয়াই হয়না বটে।
জানতে খুব ইচ্ছা হল খবর রাখো কিনা
বহুদিন ধরে আমি আর কবিতা লিখছি না।

Wednesday, 19 December 2018

মৃত ছন্দ




কবিরাও মরে দিনে দিনে, বার বার,
জমা রয়ে যায় শুধু কথাগুলো;
জং ধরা ফ্রেমের গায়ে গল্প লেগে থাকে,
ভাঙা কার্নিশে প্রেম জমায় হুলো;

Sunday, 9 December 2018

আদরের আবদার





           বই নিয়ে পড়াটা সেই কোন ছোটবেলার অভ্যাস। একটু সময় যেই পেয়েছি অমনি গল্পের বই খুলে বসে গেছি। আসল সময়ে না পড়ে সেই পুরনো বিজ্ঞান ইতিহাস ভূগোল বই ঘাঁটার ভেতর কেমন একটা আলাদা মজা অনুভব করতাম। তা মগজের একটু পরিনতি আসতে বুঝলাম জীবের ধর্মই সামনে এগোনো, পিছনে তাকানো না। এখন তাই এসব কমিয়ে দিয়েছি। একদমই কিছু করার না থাকলে তখন এসব করি আর কি। তো সেদিন জানলা দিয়ে হাঁ করে বাইরে তাকিয়ে আছি, কি দেখছি সেটাও জানি না; কিন্তু তাকিয়ে আছি। ওদিকে এক বাটি ডাল উনুনে ফুটে ফুটে আধ বাটির নিচে নেমে এসেছে। কিছুক্ষন বাদে হুঁশ আসতে অনুভব করলাম আমি সূর্যগ্রহণ নিয়ে ভাবা শুরু করেছিলাম। ভাবতে ভাবতে কখন যে চিন্তা ভাবনা গুলো সূর্যের তাপে বাষ্প হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। ডালটা নামিয়ে এসে চেয়ারে বসে ভাবতে শুরু করলাম আসল ভাবনার শুরুটা কোথায় ছিল।

কখনো আসবে বলে

তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া হয় না আর
বদলে গেছে পথ, অচেনা সব গলি;
 
কথার পরে কথা গুলো গুলোয় বারংবার;
 
হয়তো অচেনা পথই হারিয়ে দিচ্ছে আবার।

Monday, 22 October 2018

শুভ বিজয়া



প্রায় এক মাস হতে চললো বাড়ি ছাড়া৷ সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দূরে বসে আছি কোন এক নতুন ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এই কদিনে অভ্যাস, স্বভাব, পরিবেশ, মানুষজন বেশ অনেক খানি বদলেছে। তাই পুরনোকে ধরে রেখে নতুনকে বরণ করার একটা নিরন্তর চেষ্টা চলেই যাচ্ছে লোকচোখের আড়ালে। অনেক কিছু মানাতে পারলেও একটা জিনিসকে মানাতে পারিনি, সেটা হলো দুর্গাপুজো।
বছর পঁচিশ বয়সে এসে এই প্রথমবার পুজো হাতছাড়া হওয়ার অনুভূতি প্রকাশের কোন ভাষা হয় না। বাঙালি আবেগপ্রবণ না তেমন, মনের থেকে মাথা দিয়ে চলতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু পুজো এলেই সব হিসেব কেমন পালটে যায়। তাই প্রথমবার তো; তাই হয়তো ওজনটা একটু বেশিই। যদি প্রশ্ন আসে এরম যে দেশের বাইরে এই প্রথম বার থেকে কি কি মিস করলাম বেশি; তাহলে হয়তো পরের পর বেশ কিছু পয়েন্ট দাঁড় করিয়ে দিতে পারবো। 

Wednesday, 17 October 2018

অন্য তাজ…





ব্যাগপত্র গোছানো মোটামুটি শেষ কাল বিকাল হলেই রওনা দেওয়া যাবে ছোট্ট হিয়ার মনের ইচ্ছা পূরণ করতে প্রায় অনেক বছর ধরে তার ইচ্ছা সে বেড়াতে যাবে কিন্তু যাব,যাচ্ছি এই করে করেই আর হয়ে ওঠে না তন্ময়দার সরকারি অফিসে কাজ নেই এই ধারণাটা যে ঠিক কতটা ভুল সেটা তন্ময়দাকে দেখলেই বোঝা যায় নিত্তি ধরে ঠিক পৌনে নটায় বেরনো বাড়ি থেকে আর ফিরতে ফিরতে সেই রাত সাড়ে আটটা কি নটা; এর মধ্যেই জীবন শেষশেষ কবে পরিবারকে নিয়ে বেড়াতে গেছেন সেটা বোধহয় বৌদি ক্যালেণ্ডারে দাগ দিয়ে রেখেছে অনেক বলে কয়ে এতো দিন পর একটা প্ল্যান হয়েছে ট্রেনের টিকিট কেটে এনে বৌদির হাতে দেওয়ার পর বৌদির তো হার্টফেল হওয়ার যোগাড় তা যাই হোক বাইরে যে যাওয়া হচ্ছে এটাই অনেক মার্চ মাস, গরমটা কলকাতাতে একটু একটু জানান দিলেও দিল্লি আগ্রা যাওয়ার জন্যে বেশ বেশ ভালো মরসুম তাই সব ভেবে চিন্তেই একদম দিল্লি আগ্রার প্ল্যানটা সেরে ফেলেছেন তন্ময় দা শুক্রবার রাতের ট্রেন ধরে আগে আগ্রা, তার পর সেখান থেকে দিল্লি হয়ে অমৃতসরের লঙ্গর খেয়ে একদম প্লেন ধরে বাড়ি ফিরবে, মোটামুটি এরমই প্ল্যান তাই দাঁড়ি পাল্লা মেপে সব পনেরো কেজির মধ্যে রেখেছে তন্ময় দা, যাতে সহজে চেক-ইনে পাচার করে দেওয়া যায় যাওয়ার আগের দিন রাতে বাড়ির সবাই মিলে খেতে বসার আগে হিয়া তন্ময় দা কে জিজ্ঞাসা করলো,

Thursday, 6 September 2018

শেষ রজনী




অদ্যই শেষ রজনী। কাল শুধু এসে একবার মুখ দেখিয়ে কার্ডটা জমা দিতে পারলেই ব্যাস শেষ। এরম একটা ভাব নিয়েই বিদায়ের মেলটা পাঠাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু না, আগে থেকে ভাবা আর সেই পরিস্থিতে অনুভব করার মধ্যে বেশ অনেকখানি তফাত আছে। এই কথাটাও হয়তো নতুন কিছু না, সবার জানা; কিন্তু পরিস্থিতিটাই আসল খেলা খেলে যায়। অ্যাড্রিনালিনের মিশ্রনে কোন সময় যে ট্রাইটেশান হয়ে কি রঙ নেবে কেউই জানে না।

Saturday, 18 August 2018

স্বাধীনতা-দিবস





সপ্তাহের মাঝে ছুটি, এর থেকে ঈশ্বরিক সুখ আর কি হতে পারে। কলকাতাতে থেকে এক মাস বিরিয়ানি না খাওয়ার মত গর্হিত অপরাধের বোঝা বাড়াবো না বলেই টুক করে গুটি গুটি পায়ে অফিস থেকে ধাঁ, ঠিক সন্ধ্যেটা নামার পরে পরেই। বাস ধরে সোজা সায়েন্স সিটি, তার পরেই বাস বদলে পার্কসার্কাস; তার পর সেকেন্ড তিরিশ হেঁটেই রয়্যাল বিরিয়ানি। ঠিক মনে হচ্ছিল অপরাধের বোঝা ধুয়ে ফেলতে কোন মন্দির বা মসজিদে এসেছি।

Sunday, 15 July 2018

স্বপ্নের উড়ান




এখন আমার এসি ছাড়া ঘুম হয় না। অফিসে সারাদিন এসিতে থাকার পর অপেক্ষায় থাকি কখন বাড়ি ফিরে এসিটা একটু চালাব। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথটাও এসি বাসেই কেটে যায়, বিরক্তির জায়গা শুধু ওই বাসস্টপ থেকে বাড়ির দোরগোড়া অবধি পথটা। কলকাতার প্যাচ প্যাচে গরম নিয়ে হাজার অভিযোগ জমা হয় ওই পাঁচ-দশ মিনিটের হাঁটা পথটায়। এক নিশ্বাসে উগরে দি বাড়ি ঢুকেই। স্বভাবের দোষে এখন আর নন এসি বাসে যাতায়াত করতেও পারি না। সেদিন বাড়ি ফিরে নিত্যদিনের অভ্যেস মতোই ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পরে, স্নান সেরে যখন এসিতে ঢুকলাম, মনে হল যেন দুনিয়ার সকল সুখ ওখানেই আছে। জলদি খেয়ে দেয়ে নিয়ে বিছানায় শুধু গড়িয়েছি মিনিট দশ পনেরো হলো, অমনি টুক করে কারেন্ট অফ। মনে হল যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। উগরে দেওয়া ক্ষোভ যেন নতুন করে জন্ম নিল আবার, মুখ দিয়ে স্বতোতসারিত ভাবে বেরিয়ে এলো, “ধুর শালা, এখনই যেতে হল…!! এবার আমি ঘুমাবো কি করে?” মানুষ এভাবেই অভ্যাসের দাস হয়ে যায়। সেদিন আর ঘুম হয়নি, রাত তিনটে অবধি জেগে থেকে কারেন্ট আসার অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কারেন্ট না আসায় আর ঘুম হয়নি। কিন্তু ওই ছেলেটা এভাবেই ঘুমিয়েছে দিনের পর দিন, কেউ জানতেও চায় নি তার কষ্টের কথা। খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমার নাক উঁচু তেমন ছিল না কিন্তু দুধ খাওয়া নিয়ে উদয়াস্ত এক চোট পর্ব চলত। আমিও খাব না, আর বাড়ির লোকেও ছাড়বে না। অর্ধেক দিন লুকিয়ে লুকিয়ে জানলা দিয়ে কত যে দুধ ফেলেছি তার হিসাব দিলে কয়েক হাজার টাকা হয়ে যাবে।বাবা মা বার বার জানতে চেয়েছে আমি দুধ খেয়েছি কিনা কিন্তু কেউ কখনো জানতে ছায়নি 'ওই' ছেলেটা কি খেয়েছে।

Sunday, 24 June 2018

অন্য স্বপ্ন






মুখটা ঘুরিয়ে যেই না পিছনে দেখতে গেছি, একটা বড় বরফের বল এসে মুখে লাগলো পিছন ফিরে দেখি ঈশিতা মুচকি মুচকি হাসছে, বুঝেই গেলাম এই কম্মটি ওরই। আমিও আর বাদ যাবো কেন, আমিও একতাল বরফ তুলে গোল্লা পাকিয়ে ছুঁড়লাম। এভাবেই বরফ ছোঁড়াছুঁড়ি, তার পর সাদা বরফে গড়াগড়ি; স্নো-ম্যান বানানো, তাকে চশমা পরিয়ে কত ছবি তুলছি। হঠাত ঈশিতা বললো, “তুমি কিছু বুঝতে পারলে?” আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললাম, “কই কিছু না তোকেন? কি হল?” ঈশিতা কেমন একটা ভয়ে পেয়ে বললো, “ না কিছু না।” আমরা দমলাম না, বরফ নিয়ে খেলেই যাচ্ছি; কলকাতার দাবদাহ থেকে মুক্তি কিছু দিনের। তারিয়ে তারিয়ে উপোভোগ করছি। একটা সেলফি তুলতে যাবো হঠাত করে দেখি পায়ের তলাটা কেমন কাঁপছে। অ্যাভালান্স আসছে ভেবে আমি আর ঈশিতা প্রায় প্রানপনে দৌড় শুরু করছি, হঠাত করেই একটা তীব্র আওয়াজ পেলাম, “ কিরে আর কতক্ষন ঘুমাবি, অফিস থেকে তো বের করে দেবে লেট করে গেলে...” ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখলাম মা ডাকছে, ওটা স্বপ্ন ছিল। মা বার বার ধাক্কা দিচ্ছিল বলে ওরম ভূমিকম্পের ফিল হচ্ছিল। ঘুম ভেঙ্গে এক লহমায় নেমে এলাম বরফের আচ্ছাদন থেকে কাঠফাটা রোদের মধ্যে। অফিস যেতে হবে, তাই আর বেশি ভাবা হয়নি। ধুর, মা আসল মজাটাই ঘেঁটে দিল।

Sunday, 17 June 2018

হ্যাঁ, আমিই DSLR





মহাভারতের যুগে দ্রৌপদী আর এখনের কালে ডি-এসেলার, এই দুটোর আর কোন মান ইজ্জত রইলো না। তখন দুঃশাসন আর এখন ইজি ইনস্টলমেন্টের অপশাষন, এই নিয়েই প্রায় ছারখার হয়ে গেল। ছিঃ ছিঃ ছিঃ, কোন ইজ্জত রাখল না আর। ওভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই, আমিই সে; ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্টার। ওহ বাবা, পুরো নামটাও জানে না অনেকে, আরে মশাই আমিই ডি-এসেলার। পার্কে, দোকানে, পুজোর আসনে, ঠাকুর ভাসানে, বিয়ের পিঁড়িতে, প্রেমের সিঁড়িতে সব জায়গায় আমায় পাওয়া যাবে। কালো হলুদ, লাল কালো আরো বেশ কিছু রঙ বদলের খেলায় আমায় পাবেন নতুন নতুন নম্বরে।

Monday, 28 May 2018

আর মাত্র মিনিট তিনেক


         


              ২৫শে মে,২০১৪। ভারতীয় সময় রাত প্রায় দুটো কি সওয়া দুটো। টিমটিম করে জ্বলতে থাকা টিভির আলোতে উদ্ভাসিত ঘরটা থেকে হঠাত বিকট আওয়াজ। গোওওওওওওওওওওওওললললললললল...............



          প্রায় চার বছর আগের কথা, সেবার বিশ্বকাপের বছর,২০১৪। তাই ফুটবল মরশুম একটু আগে আগেই শেষ হওয়ার কথা। জুন থেকেই চলবে একমাস ব্যাপি ফুটবল জ্বর আর আগে আর পরের এক মাস ব্যাপি সেই দেশগুলো নিয়ে চর্চা। ফুটবল নিয়ে কলকাতার অবস্থান নতুন করে বলে বোঝাতে হয় না। দেওয়াল লিখনের সঙ্গে সঙ্গে এই একমাস যাবত আকাশ পর্যন্ত দেখা যায় না লম্বা লম্বা সামিয়ানার মত ফ্ল্যাগের আড়ালে। বড় বাজারের ত্রিপল পট্টির এই কদিন বেশ ভালোই  ব্যবসা হয়। মানে এমনি বছরের তুলনায় বেশ ভালোই আর কি। কোথাও সবুজ হলুদ, কোথাও নীল সাদা(যদিও সেটা এখন আর আলাদা করে বোঝা যায় না), কোথাও আবার হলুদ, লাল আর কালো; মাঝে মাঝে কিছু সবুজ মেরুনও চোখে পড়ে। এই হলো কলকাতার রঙ। ফুটবল, রসগোল্লা, মিস্টি দই, তেলেভাজা মুড়ি, পলিটিক্স আর গান, এই নিয়েই কলকাতা আছে নিজের মতো, সবার থেকে আলাদা হয়ে। এখানে মোহনবাগান পাবেন, ইস্টবেঙ্গল পাবেন, মহামেডান পাবেন। পাবেন ম্যানচেস্টার, লিভারপুল, আর্সেনাল, বার্সেলোনা, রিয়েল মাদ্রিদ আরো কত কি। যদিও হাল আমলের সাথে পা মেলাতে গিয়ে, “আমি কলকাতার ফুটবল পছন্দ করি না। আমার পছন্দ অমুক দেশের তমুক টিম” এসব বলার চল বেড়েছে, তবুও কলকাতা থেকে সেই খাস ময়দানি ফুটবলের আমেজটা এখনো রয়ে গেছে। শুধু জার্সির রংটা বদলেছে।

Wednesday, 25 April 2018

Dance of Destiny






While walking on the ridge
I often look down,
I look down to the past I left behind;
I look down to the mistakes I made
I want to in the fear, conquer the wind
I want to win.

Monday, 2 April 2018

হালের হালখাতা




তুলনাটা কেমন যেন আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে। ছোট থেকে বড় সব কিছুতেই কেমন তুলনা। এটা যে শুধু হালের আমদানি এরম ভাবাটা খুব ভুল। এসব আগেও ছিল, এখনো আছে। শুধু পরিসরটা বদলে গেছে। আগে পাড়ার মীনা কাকিমার মেয়ে হয়েছে আর আমার কাকিমার ছেলে থেকে হাল আমলে আমার ফেসবুকের লাস্ট ডিপিটায় সৌরভের ডিপির থেকে বেশি লাইক পড়েছে পর্যন্ত সব কিছুতেই মুড়ি চানাচুরের মত তুলনা রয়ে গেছে। তো এসব লিখছি মানে এরম ভাবার কোন কারন নেই যে আমি তুলনা করি না, আমিও করি। আমায় ওমন সাধু পুরুষ ভাবার বিশেষ অবকাশ আমি দি না।

পাহাড়ের ডাকে... ( দ্বিতীয় পর্ব )

ট্রেনের বিপত্তি


ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পর আর বিশেষ বিপত্তি হয় নি। সবাই সবার মত জায়গা বুঝে নিয়ে চুপচাপ ঘুমের ব্যবস্থা করছে। আমি চিরকালই আপার, তাই বাই ডিফল্ট সেদিকেই চলে গেছি। এবার আবার সাইড আপার, একেবারে সোনায় সোহাগা। রেলের দেওয়া কম্বলটা সুন্দর করে পেতে তার ওপর চাদর টাকে টানটান করে নিয়ে মাথার দোরগোড়ায় ক্যামেরার ব্যাগটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে, সেই কি ঘুম। সারাদিনের খাটা খাটুনির পর এক পরম তৃপ্তির ঘুম। এ ব্যাপারে বলে রাখা ভালো ট্রেনের দুলুনিতে আমার ঘুমের একদম কোন প্রবলেম নেই, বরং ওই দুলুনিতে আরো জমে যায় ঘুমটা। তাই বুঝতেই পারিনি কখন সকাল হয়ে গেছে।

সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ একটা আলগা টোকা অনুভব করলাম। আধ খোলা চোখে দেখি এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত অবধি দাঁত বের করে সোহম হাসছে। কিছু ভুলভাল দাবি হবে ভেবেই আমি আবার যেই চোখ বুজতে যাচ্ছি অমনি ব্যাটা বলে, "আর কত ঘুমোবি? এবার ওঠ।" গালাগালটা মুখ ফস্কে বেরিয়েই আসছিলো কিন্তু কোন মতে সামলে নিয়ে বুঝলাম ইগনোর করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। চোখ বুজে আবার শুয়ে পড়লাম।  আধ ঘন্টা পর আবার ডাক। এবার সেই অম্লান বদনের নির্মল হাসি। সাথে একটা অমানবিক দাবি, "ভাই খুব ক্ষিদে পাচ্ছে।" এই প্রশ্নের উত্তর ছিল না আমার কাছে। তবুও একটা পজিটিভ টোনে উত্তর দিয়ে বললাম," হারামজাদা এই তো খেলি, এর মধ্যেই... একটু ওয়েট করে যা। আমি উঠলে খাবি।" এটা বলেই আবার যেই না একটু পাশ ফিরেছি অমনি ডাক আবার। বুঝলাম ভবি ভোলার নয়, তাই অগত্যা ঘুমের দফা রফা করে আমি উঠে বসলাম। সঙ্গে সঙ্গে হাসিটা আরো চওড়া হয়ে গেল। মিনিট খানেকও গেলো না মুখের গোড়ায় চা এসে গেল। বুঝলাম বেকার বেকার ক্ষুধার্ত বাঘটাকে আটকাতে চাইছিলাম। সোহম চা খেলো না, বললো বাথরুমের অবস্থা তেমন ভালো না, তাই চাপ হয়ে যাবে চা খেলে। পরিবর্তে দুটো শিঙাড়া আর দুটো প্যাকেট সস(আমার ভাগেরটাও ও খেয়েছে)। ভাবলাম এই খাওয়ার তারসে কিছুক্ষন বুঝি আরামে থাকা যাবে। কিন্তু না, খুব মেরেকেটে এক ঘন্টা যাওয়ার পরেই আবার পেটে টান। এবারেও উদ্ধার কার্যে শিঙাড়া, বাকিটা চর্বিতচর্বণ। ইতিমধ্যে পাশের কামরা থেকে সৌরভ এসে হাজির। জিনিসপত্র গুলো খালি থাকবে ভেবে আমি চলে গেলাম ওই কামরায়। বেশ ভালো জায়গা পেয়ে সকালের বাকি ঘুমটাও সেরে নিলাম।

প্রায় বেশ কিছুক্ষন পর হঠাত করে একটা টোকা অনুভব করলাম। আধ ঘুমে চোখ খুলে দেখি সৌরভ একটা ফয়েল এনে বলছে জল খাবারটা খেয়ে নিতে। আমিও দিব্যি খেয়ে নিয়ে তার পর নিজের জায়গায় ফিরে এসে দেখি সোহম তখন মহানন্দে সস খাচ্ছে। এত সস খেয়েছে ও যে পেটের থেকে প্রায় এক কেজি টমেটো বেরিয়ে যাবে। সে যাই হোক জায়গায় ফিরেই একটা ভালো খবর পেলাম, আমায় দেখেই মহানন্দে সোহম বলে উঠল, "ভাই ট্রেন একদম অন টাইম।" সততই খুশির খবর, তবে কেমন যেন খটকা লাগলো। যোধপুর এক্সপ্রেসের ব্যাপারে যা শুনেছিলাম সেটার সাথে মেলাতে পারছিলাম না। মনে মনে সব শালাকে এক হাত নেবার কথা ভেবে রাখছি, ঠিক তখনই মুঘলসরাই স্টেশনে ট্রেন ঢুকলো। সময় ১১টা, টাইমের ৫ মিনিট আগে। মনটা খুশি খুশি হয়ে উঠল, মেহেবুবাকে দেখতে কার না মন চায়...

খুশি থাকলো না বেশিক্ষন। মীরজপুর থেকে ট্রাভেল খানা ডট কমের লোভনীয় গুগুল ইমেজ দেওয়া ডাল ফ্রাই আর মিক্স ভেজ অর্ডার করা ছিল। কথা ছিল জায়গা এলেই আমাদের সিটে ডেলিভারি দেবে। কিন্তু কোথায় কি, শালা স্টেশানও ছেড়ে গেল আর আমাদের পেটটাও খালি রয়ে গেল। কাজের কাজ হল না। তড়িঘড়ি কাজ চালাতে আবার অন্য একটা ওয়েব সাইট থেকে মিক্স ভেজ অর্ডার করা হল। এবার বলা হল এলাহাবাদ স্টেশান থেকেই খাবার উঠবে। কিন্তু ভাগ্যের মার, কে বাঁচায় আর। এলাহাবাদের সঙ্গমে গঙ্গা যমুনার মিলন হলেও আমাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লো না। আবার ধোঁকা, স্টেশান চলে গেল, কিন্তু না... এবারেও হল না। উপায়ন্তর না দেখে বিরক্তি চরম সীমায় পৌঁছানোর আগেই বাসি লুচি আর আধা গন্ধ লাগা আলুর তরকারি দিয়েই দুপুরের খাবারটা সারতে হল। ইতিমধ্যে নিজের জায়গায় ফিরে গেছে যোধপুর এক্সপ্রেস। টাইমের থেকে বেশ অনেক খানি পিছনে, এলাহাবাদ ঢুকতে প্রায় দু ঘন্টা মত লেট।বুঝলাম কপালে দু:খ আসছে।

কথা ছিল চারটে নাগাদ কানপুর পৌছাবে, কিন্তু চারটের সময় ট্রেন কোন এক ভাগাড়ের পাশে উদবাস্তুর মত দাঁড়িয়ে আছে। জিওর দৌলতে কোন মতে গুগুল ম্যাপটা কানেক্ট করে দেখি কানপুর কোথায় কি! মাইলের পর মাইলের দূরে, বুঝেই গেলাম কানপুর আসতে মিনিমাম সাতটা, আটটা। ফ্রাস্টেশান যাতে না বাড়ে তাই সরাসরি একটা চায়ের অর্ডার দিয়ে দিলাম। বাঙ্গালির সোজা সলিউশান যখন কিছু ভাল যাচ্ছে না, এক কাপ চা খাও। আমিও তাই করলাম।ওদিকে সোহমের সে সবের হুঁশ নেই, দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে। কি আর করি তাই আমি আর সৌরভ বসে গল্প জুড়লাম। আগের দিন ইনসেন্টিভ আসায় এটাই এখন হট টপিক। তাই সেই সব নিয়েই কথায় কথায় কিছুটা টাইম কাটানো গেল। এদিকে এটা যোধপুর এক্সপ্রেস না যোধপুর কার্ট সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল। গতি মন্থরতার প্রায় সমস্ত লিমিট ছাড়িয়ে গেছে এই ট্রেন।

প্রায় অনেকক্ষন গল্প করার পর ওই সাড়ে ছটা, সাতটা নাগাদ সোহমের সিটে গিয়ে দেখি ছেলে বসে বসে চিপস খাচ্ছে আর পাশে খালি দই এর কৌটো রাখা। আমায় দেখেই এক গাল হেসে বলছে," কি করব ভাই, খুব খিদে পাচ্ছিল।" আমি যে কি উত্তর দেব বুঝে পেলাম না।  তখনও কানপুর আসেনি, তাই ফ্রাস্ট্রেশানটা যে চরম সীমায় গেছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। তাই সোহমের অনবরত খাওয়াটাকেও দোষ দিতেও পারছি না।আমিও চরম ভাবে হতাশ। শেষমেষ রাত সাতটা তিরিশ নাগাদ কানপুরের দর্শন পাওয়া গেল। প্রায় সাড়ে তিন চার ঘন্টার ঘাটতি। খুশি হওয়ার মত কোন বিষয় না হলেও একমাত্র সিলভার লাইনিং হল মেহেবুবার আর একটু কাছে এলাম।

কাছে যাওয়ার এই অনুভুতিটা বেশ উপভোগ্য। কিন্তু সেটার একটা লিমিটেশান থাকে। আমার আর তর সইছিলো না। এদিকে সিডিউল টাইম অনুযায়ী রাত আটটায় আগ্রা ফোর্ট স্টেশানে নামার কথা। নড়ে নড়ে ট্রেন এগারোটা নাগাদ তুন্ডলাতে হাজিরা দিল। মন বলছে আর একটু খানি, খুশি প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। কিন্তু না, আবার বিপত্তি। তুন্ডলা থেকে হিসাব কষে ঠিক ২০-২৫ মিনিট লাগার কথা, কিন্তু সিংগেল লাইন হওয়ার জন্যে সিগনাল না পেয়ে প্রায় ২০-২৫ মিনিট আটকে আগ্রা ফোর্ট স্টেশানের বাইরে। মানে দেখতে পাচ্ছি স্টেশানটা, কিন্তু নেমে যেতে পারছি না। ইতিমধ্যে আর তর সইতে না পেরে ট্রেনের ক্যান্টিনের এগ বিরিয়ানিই মহানন্দে সাঁটিয়ে দিয়েছি। এই বিরিয়ানি শব্দটা বাঙালিদের কাছে খুব আদরের। হলুদ রঙের ভাতের মধ্যে ডিম ফেলে দিয়ে এগ বিরিয়ানির দাবি দিলে মেনে নেব নাকি? এরা বিরিয়ানির নামে যে প্রহসনটা চালাচ্ছে সেটা নিয়ে অবিলম্বে আমাদের বাঙালি ইউনিয়নের একটা মানহানির মামলা করা উচিত।শালা বলে সাদা ভাতে ডিমের ঝোল ফেলে বলে নাকি এগ বিরিয়ানি!!! কিন্তু খিদের মুখে নিরুপায় হয়েই গোগ্রাসে গিলতে বাধ্য হয়েছি, না হলে ও পথ আর মাড়াই নাকি!!!   তো যাই হোক, অনেক টাল বাহানার পর প্রায় পৌনে বারোটা নাগাদ পা রাখলাম আগ্রা স্টেশানে। অনেক উপেক্ষা, অনেক বিপত্তির পর আমি এলাম আমার স্বপ্নের শহরে, আমার মেহেবুবার কাছে। সময়টা যেন আর কাটছে  না....

নশ্বর

আমি জানি নশ্বর আমি; একটা একটা দিন ফুরায় আর আমি গুনি; এই বুঝি বাজল সাইরেন; শরীরের কারখানায় যখন ধীরে ধীরে কর্মবিরতি আসতে থাকে হঠাৎ করেই একদিন ...