Sunday, 26 November 2017

অ্যাপোক্যালিপ্স



                                                               (এক)


-       বাবা, বাবা, আমার কেমন যেন অসুবিধা হচ্ছে
-       কেন? কি হয়েছে?
-       আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে
-       সেকি…!! কেন?
-       জানি না ঠিক, মনে হয় অক্সিজেন লেভেলটা কমে গেছে?
-       এই তো সেদিন অক্সিজেন রিচার্জ করিয়ে দিলাম, এর মধ্যেই কি করে কমলো
-       আসলে সেদিন আমাদের পাশের টাওয়ারের মাথায় যে নতুন স্টেডিয়ামটার ইনোগারেশান হলো, সেটাতেই আমি সখ করে একটু খেলতে গেছিলাম প্রায় ৪০ গজ মতো ছুটে এসে জোরে একটা শট মেরেছিলাম, তারপরেই আমার বিপি গেলো বেড়ে, জোরে জোরে নিঃশ্বাস পড়ছিলো; তাতেই অনেকটা অক্সিজেন খরচা হয়ে গেছে।
-       কিন্তু মাঠে নেমে আজ কাল কে খেলে? তোর গেম রুমের ব্যবস্থাটাও তো করে দিলাম।
-       মাঠে তো নামিনি।
-       তাহলে?? দৌড়লি কি করে আর বিপিই বা বাড়লো কি করে?
-       আসলে এটা একটা নতুন টেকনোলজি। বিশাল জায়েন্ট স্ক্রিনে খেলা যায়। অগমেন্টেড রিয়েলিটির মতো, কিন্তু অনেক অনেকটা আডভান্স। এখানে তুমি নিজের বডির এনার্জি নিজের প্লেয়ারের মধ্যে ট্রান্সফার করতে পারো। তো সে ভাবেই আমি করতে গেছিলাম। তো অনেক খানি ছুটতে হয়েছে, আর তাতে করেই আমার বেশি অক্সিজেন খরচা হয়ে গেছে।
-       কি যে করিস না...!!! দাঁড়া, সামনের পাম্প থেকে রিচার্জ করে দেবো। আর এই ভাবে চললে হবে না। একটু কেয়ারফুলি চলিস পরের বার থেকে।

কথাগুলো এভাবেই ভেসে আসছিলো এখনকার দিনে কেউ আর মুখে কথা বলে না, যা যা কথা ভাবে সেই সব কথা গুলো মনে মনেই পাচার হয়ে যায় অ্যাস্ট্রোনটদের মুখে যেরম মাস্কের মতো থাকে, অনেকটা ঠিক সেরকম মাস্ক লাগানো হয় এখানে, ভেতরে হাজারটা সেন্সার। সব কথা, ইমোশান সবটুকুকে সেন্স করে নিয়ে মনে মনেই কথা চালাচালি হয়ে যায়। সবাই ভীষণ ব্যস্ত, কারো কাছেই কথা বলার সময় নেই




                                                 (দুই)

  
পার্কে বসে প্রেম করার ব্যাপারটা একদম নেই পার্কই নেই, তো আর বসা; তাছাড়াও প্রেম করতে গেলে তো কথা বলতে হবে, অতো সময় কই এখানে? সমস্ত রকম ইমোশান গুলোকে সেন্সার ক্যাপচার করে নেয়, তার পর সেটা সেই ইপ্সিত মানুষটার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পুরো শহরটাই একটা নিউরাল নেটওয়ার্ক দিয়ে কানেক্ট করা। মিনিটে মিনিটে স্নায়বিক উদ্দীপনাকেও ডেটাবেসে ভরে নেয়। ম্যামথ ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট দিয়ে সব ব্যাপারটা দেখা শোনা করা হয়। এসব টেকনিকাল কথা না হয় থাক, আসল ব্যাপার হলো এখনকার মানুষ জনের মধ্যে সেই মানবিক অনুভূতি গুলো আর নেই। সেদিন কেই একটা কথোপোকথন শুনছিলাম,

-       আই...আই...আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-       আই অ্যাম নট কনভিনসড্‌।
-       আচ্ছা, তাহলে বলো আমায় কি করতে হবে?
-       তোমার মনে এখনো ডাউট আছে।
-       নো, আই অ্যাম অ্যাবসোলুটলি ক্লিয়ার অ্যাবাউট মাই ফিলিংস।
-       নো, ইউ আর নট।
-       কেন? ওয়াই আর ইউ টেলিং দিস?
-       কথাটা বলার সময় তোমার ডান কানের পাতার টেম্পারেচার ২ ডিগ্রি বেড়ে গেছিলো, হার্টবিট সেই নর্মাল, ও না নর্মালের থেকে ২.৬৫ বিটস কম। আর ডান দিকের চোখের পাতাটা ১.৩৫ টাইমস/সেকেন্ড বেশি কাঁপছিল, ব্লাড প্রেশার ১২০/৮০; আর সব থেকে বড় কথা এবারে তুমি কথা বলতে গিয়ে ফাম্বেল করেছো। তুমি যখন কোনো -কিছু নিয়ে সিওর থাকো তখন ঝরঝর করে বলে দাও ৮৯ ওয়ার্ডস পার সেকেন্ড স্পিডে।আমি লাস্ট মাসের তিনটে জায়গায় ট্রেস করেছি, তোমার স্পিড ছিলো অ্যারাউন্ড ৮৭-৯০। আজ হঠাত করেই  স্পিডটা কমে ৮৪.৫ হয়ে গেলো। ইস্‌ নট দিস ফিশি?
-       না, সেরম না ব্যাপারটা। বাট আই অ্যাম টেলিং দ্যা ট্রুথ।
-       নো, ইট ইজ। প্লিস ডোন্ট ট্রাই টু চিট মি।
-       AISBJH9986, প্লিজ লিসেন টু মি আই অ্যাম ভেরি মাচ সিওর অ্যাবাউট ইট।
-       প্লিজ, কাট দ্যা ক্র্যাপ। আই কান্ট টেক দিস অল শিট।
-       প্লিজ ডোন্ট গো।
-       স্টপ ইট। আই কান্ট টেক দিস।
-       ও কে, গো টু হেল।

ব্যাস, ভবলীলা সাঙ্গ। দু মাস, চার দিন, ১৪ ঘন্টা, ২৫ মিনিট, ২৯ সেকেন্ড আর গুটি কিছু মিলি-মাইক্রো সেকেন্ডের বন্ধুত্ব ভেঙ্গে গেলো। এরম চরম দুঃখের সময় কেই বা অতো স্টপওয়াচ নিয়ে মাপবে বলুন, ডেটাবেসে স্টোর আছে হয়তো। পরে খুঁজে দেখা যাবে। তো আমার বন্ধুর সাথে তো এরম ঘটনা ঘটলো। বন্ধু মানে কিন্ত আমরা কখনো মুখোমুখি দেখা করিনি। ওই খেলার সময় ওর আর আমার প্লেয়ারের ধাক্কা হয়েছিলো। সেই থেকেই এক্সচেঞ্জে অফ ভাইব, এক্সচেঞ্জ অফ এনার্জি। সেটাই কম্পিউটারে ফিড করিয়ে দেখা গেলো, আমার আর ওর মধ্যে ৮৮.৩২% কম্প্যাটিবিলিট আছে। ব্যাস, বন্ধু হয়ে গেলাম। নিউরাল নেটওয়ার্ক স্পেশাল কলামে অ্যাড করে নিয়েছি ফ্রেন্ড হিসাবে। আমাদের বেশ ঘন ঘনই কথ হয়, ওই ধরুন বছরে ৩-৪ বার মতো।
         
আর ওই যে নাম্বারটা দেখলেন ওটা আসলে কোনো আলতু ফালতু নাম্বার না, ওটা আসলে নামএখানে নাম্বার ধরেই সবাই কে ডাকা হয় কোনো নাম নেই আলাদা ভাবে কনফিউশান যাতে না হয়, সেই জন্যেই ডেটাবেস মেন্টেন করাটাও অনেক সোজা সে যাই হোক, হাল আমলের এটাই ট্রেন্ড আর অনেক আগে একটা কবিতার লাইন শুনেছিলাম, “আমার ছেলের বাঙলাটা ঠিক আসে না”, সেটারই লার্জার ভারশানটা এখানে দেখবেন এখানে বাঙালি বলে তেমন ভাবে কিছু নেই, তবে কিছু কিছু মানুষের ডেটা নিয়ে বেশ অনেকটা আগে অবধি ব্যাকট্র্যাক করে দেখা গেছিলো এদের অনেকে বাঙালি ছিলো, বাংলা ভাষায় নাকি কথাও বলতো তাদেরই ডিসেন্ডেন্টগুলো এখন বাইনারি ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানেই না বাংলা ভাষা আসা তো দুরের কথা, চিন্তা ভাবনা গুলোও বাংলা ভাষায় আসেনা শুধু বাংলা বলে না, সবেরই এক দশা

আমিই তো এখন বাঙলা লেখার নতুন সফটওয়্যারটা টেস্ট করতেই লিখছি এটা


                                         (তিন) 


ল্যাবে রিসার্চ করছি সেদিন; এই এয়ার পার্টিকেলের কম্পজিশান নিয়ে বেশ অনেক দিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি -৪টে জার্নাল পাবলিশ করে ফেলেছি ইতিমধ্যে আজ কাল কার কলেজে অ্যাডমিশান নেওয়ার যা সব ক্রাইটেরিয়া করে দিয়ে না, মানে জাস্ট অসহ্য ৩টে জার্নাল পাবলিকেশান নাকি চাই চাই, নাহলে হেঁদি পেঁচি কলেজগুলোও মুছবেনা আপনাকে তো যেটা বলছিলাম, সেদিন কেস-স্টাডি করতে গিয়ে দেখি ২০১৭ সালের দিল্লির আবহাওয়া নিয়ে বেশ অনেক কথাই লেখা আছে ইন্টারনেটে সঙ্গে সঙ্গে ঘেঁটে অনেক ভিডিও পেলাম দেখলাম ওই ধোঁওয়াশা নিয়েই মানুষের কি হতাশা এক দিন নাকি এই গাড়ি চলবে, আর একদিন নাকি ওই গাড়ি; আরো কত কি এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স নিয়েও তো মানুষের কাল ঘাম ছুটে যাওয়ার মতো অবস্থা বেজার জোরে হেসে ফেলেছি বাপু, ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসতে পথ পেলাম না আর (হা হা হা…) এই টুকু নিয়েই নাকি এতো

শুনুন তাহলে

আমাদের এখানে অক্সিজেন প্রায় নেই ওই মাঝে মাঝে কিছু পাম্প রয়েছে ওখান থেকেই রিচার্জ করে চালাতে হয় দিনে দিনে তো হু হু করে দাম বাড়ছে বাইরে বেরলেই আমরা মাস্ক পরে বেরই, যাতে অক্সিজেনের অভাব না হয় জল বলছেন…!!! আমাদের খাওয়ার মতো জল নেই লিকুইড নাইট্রোজেন দিয়ে বডি কুল করে রেখে সেই বডির ওয়াটার কন্টেন্টকেই সারকুলেট করি নতুন করে জল ভরার জায়গা নেই ভাবতে পারেন, এক প্যাকেট বৃস্টির দাম ১৮০ টাকা(ততকালিন মুদ্রায়) এই কবি,গায়ক গুলো মাঝে মাঝে কেনে নিলামে এসব না দেখলে নাকি লেখা বেরয় না, গান আসেনা দিনে দিনে যা অবস্থা আসছে একটু ভালো মানের বৃষ্টি পেতে গেলে আপনাকে নিলামে অংশ নিতে হবে মানুষ মানুষের সাথে কথা বলে না, মনের কথা বলার আগেই পাওয়ার ব্যাক-আপ শেষ হয়ে যায়, ব্যাস ঘুমিয়ে পরতে হয় কথা বলার সময় নেই পার্কে বসে প্রেম করার সময় নেই, পেসেন্স নামের জিনিসটা তো কবেই বেচে দিয়েছে মানুষ ভালোবাসা নেই, প্রেম নেই, কিছু নেই আসল জিনিষ, কারো সময়ই নেই তাহলে এর থেকে আর খারাপ কি হতে পারে? তবুও দেখেছেন আমাদের এসব নিয়ে হাউ হাউ করতে,মাথা কুটে মরতে? দেখেননি তোকেনো জানেন? কারন আমাদের এসব করার মতোও সময়টা নেই কে কি করলো, কি করলো না সেসবের থেকে আমি নিজে কি করছি সেটা নিয়ে ভাবাটাই বেশি কাজের বলে মনে করি আমরা
অন্যদের দিকে আঙ্গুল তুলে দিয়ে আমাদের জীবনটা কেমন দুর্বিসহ করে দিলেন দেখুন তোনিজের কাজটা করলেই তো ঝামেলা মিটে যেতোJ

পুরোনো সিনেমা দেখার বেশ সখ আছে আমার মাঝে মাঝে নিজের চার্জ বেঁচে গেলে আমি ওই সব সিনেমা দেখি সেদিনই একটা সিনেমা দেখছিলামদ্যা অ্যাপোক্যালিপ্স বিগিন্স”, ২০৬৩ সালের সিনেমা সেখানেই দেখলাম কি ভাবে মানুষ নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মেরে আবার কালিদাসের কথা তুলে হাসে মানে আজব স্পিসিস যাকে বলে আমার ৮ জন্ম আগের যিনি ছিলেন তিনি নাকি বলতেনপাগলেও নিজের ভালো বোঝে…”, কিন্তু এই মানুষে বোঝে না অবলীলায় কেমন নিজের কবর খুঁড়ে গেছে আর অন্যকে দেখে হেসেছে হা হা হা

ছোট মুখে অনেক বড় কথা বলে ফেললাম, কিছু মাইন্ড করবেন না আমি যাই আজ, নতুন কিছু ড্রিম আজ সিমুলেশানে বসানো আছে দেখি কি কি আউটপুট এলো পরে আবার আসবো ভালো থাকবেনটাটা



(সমাধি)





















Thursday, 23 November 2017

অন্য নভেম্বর


তোমার বাড়ির ছাদের ওপর নভেম্বরের মেঘ,
অবহেলায় চুল সরেনি, ঠোঁট নামেনি ঠোঁটে;
অতঃপর এই নিম্নচাপই বাড়াবে উদ্বেগ,
ফেলে যাওয়া সময়গুলোই স্মৃতি হয়ে ওঠে।

তোমার শরীর জুড়ে এখন নভেম্বরের মেঘ,
ছায়ার সাথে যুদ্ধ খালি, চাঁদ ফেরেনা ঘরে;
আমরা দুজন অনেক দূরে, ইচ্ছাটাকেই মেনে,
বিচ্ছেদটাও চিরকালেই রইবে পরস্পরে।

তোমার পায়ের তলায় এখন নভেম্বরের মেঘ,
পিষতে পারো,কারন ভীষন মরণ চেয়েছিলাম;
তোমার থেকে সরতে হবে-পুর্বাভাসেই জানি,
মেঘের থেকে বৃষ্টি ভালো, স্বীকার করে নিলাম।

তোমার মনের কোনে এখন নভেম্বরের মেঘ,
ঘুটে এসেছে, সাথে এনেছে ঝড়ের আগাম বানী;
উত্তর গুলো পাবো না- তাই জানতে চাইনি আর,
মিথ্যে প্রেমের অভিনয়ে কেবল বাড়েছে হয়রানি।

তোমার জন্যে কোথাও এখন নভেম্বরের মেঘ,
অনেক দূরে, বৃষ্টি বোঝাই করছে নরম হাওয়া;
আসার পথটা বড্ড সোজা, দিব্যি অধিকৃত
চিরকালেই কঠিন শুধু ‘চাইলে ফিরে যাওয়া’ ।।


Wednesday, 15 November 2017

নীল ছবি

আসলে আমরা কেউই জানতাম না ঠিক
সরিয়ে দেওয়া আসলে কাকে বলে?
একটা যুদ্ধ চলছিলো অনেকক্ষন
আচমকাই কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেলে
একটা তুমুল ভালবাসা তৈরি হতে গিয়ে
দুটো মানুষ কমদামে চিরশত্রুতার গল্প লিখে ফেলে;
একটা বন্দক রাখা হাওয়া বুকে টেনে নিয়ে
লেগে থাকা মানুষ দুটো ক্রমশ বোঝাতে চাইলে
কিছু যায় আসেনা তাদের কেউ কিছু ভাবলে;
একটা গিটার শ্বাস হারাচ্ছে জেনে অধিকারহীনতায় ভোগা মেয়েটা লোক দেখিয়ে বলে 'তাতে আমার কি?'
ছেলেটা নতুন করে সিগারেটটা ধরায় স্রেফ ওকে শাস্তি দেবে বলে।

আমরা কেউ খেয়াল করিনা আর;
আফসোসহীনতার মতো লোক দেখানো বাতিক হয়েছে সবার;
অস্বীকার করাটা আদতে একটা সাহসী কাজ বটে
ইগোর মতন দারুণ মদ আর একটাও নেই ইহজগতে;
কমপ্রোমাইজ করলেই আসলে ইগোর মাথা নত
এ শহরে 'প্রেম' বিষয়টা হয়েছে এলিয়েনে পরিনত।

প্লেলিস্ট বন্দক রেখে ঘুম কেনার মানে-
এ শহরের সবাই বোঝে, জানায় না কানে কানে
নিজেকে আদর করতে করতে তার শরীরেই
ডুবে মরতে চেয়েছে প্রতিটা আত্মরতি,
এ শহরের সবাই জানে, লুকাতে চায় আনমনে;
নীল ছবি তে শুধুই নোংরামি ছিল না;

কোলকাতা সব জানে...
তাই যন্ত্রণার কবিতার পপুলারিটি এ পোড়া শহরে কক্ষণো কমে না।

Thursday, 9 November 2017

তখন বসন্ত...

শরীরে বসন্ত মাস।  বিশ্বাস নিভে গেছে, যায়…  
তবু নিশ্চুপে ভালোবেসে কেউ সরে যেতে চায়;
জ্বর এখনো আসে মাঝরাতের কোলাহল শেষে
মানুষ পাগল হয় ভীষন, বিদ্রোহে আর ভালবেসে।

শরীরে বসন্ত দিন। কিছু পাতা ঝরেছিলো বেশ...
তোমাকে ছুঁয়েছিলাম শেষবার, বেইমানির অনুভূতির রেশ;
এখনো ঘুম আসেনা রাতে, এলোমেলো কিছু হাওয়া
তুমি ‘আসি’ বলোনি কিন্তু, মানে শুধুই চলে যাওয়া।

শরীরে বসন্ত কাল। আবীর হাতে কলঙ্কিনী রাধা...
কানাই কে চাই তার, অপবাদে যতই না হোক বাঁধা;
এখনো বিশ্বাস নিয়ে বসন্ত বারে বারে আসে
বাতাসে ঘৃনার সাথে আলগোছে ভালোবাসা ভাসে।

শরীরে বসন্ত দিন। কিছু পাতা ঝরেছিলো বেশ...
তখন বুঝেছিলাম ছোঁওয়ার নেশায় উত্তাপ নিঃশেষ;
ঠোঁট ছোঁওয়ানো মানা আজ, স্পর্শকাতর বলেই
ফেরোনি তুমি আর, শেষমেশ চলে গেলেই।
   
শরীরে বসন্ত মাস। বিশ্বাস নিভে গেছে যায়...
তবুও অনুভুতিগুলো পিছু ডাকে প্রেমের নিষ্ক্রিয়তায়;
এখনো জ্বরের ঘোরে স্বপ্নরা লেগে থাকে, জানো?
অবহেলায় ভেঙেছে ঘর, যায়নি আটকানো। 

Wednesday, 1 November 2017

দামিনী

।। এক ।।


- এই মেয়েটা আমার সাথে যাবি? গলির কোনের ওই ছোট্ট ঘরে, ঝিকিমিকি আলো জ্বালাবি; দারুন মজা হবে। যাবি যাবি?

- আজ পারবনি গো, শরীরটা আজ দিচ্ছে না। সকাল থেকে অনেক বার হয়েছে।

- শালা, বেশ্যা নাকি আবার হিসাব কষে দিচ্ছে, ন্যাকা শালা।

- সত্যি বলছি পারব নি গো, আজ শরীরটা আজ বয় নে।

- মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করিসনে। অনেক টাকা গলিয়েছি তোর জন্যে। এতো বড়, ঢলঢলে গতর নিয়ে বসে আছে, আবার বলে দোকান খুলবো না। বেশ্যা মাগির আবার কথা শোনো।

- আজকের দিনটা ছাড়ো না গো, কাল সুদে আসলে উসুল করে দেবো।

- চল শালা, চল।

 পেশার কাছে হেরে যেতে হয়েছে সেদিন। হাত ধরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে চলে গিয়েছিলো ওই গলির মোড়ের বাড়িটার তেতলার চিলেকোঠায়। টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় একটা আর্তনাদ আসছিলো খানিক দূর অবধি, কিন্তু রাস্তা মোড় নিতেই সব আওয়াজ বন্ধ। তেতলার ঘরে তখন চলছে প্রতিদিনের কাজের একটা রিহার্শাল। আর কান্না নেই, কোনো অভিমান, অভি্যোগ নেই; সব টুকু তখন জমা পড়েছে চোখের জলের সাথে। একটা বেশ্যার চোখের জলের হিসাব কেই বা নেয়…!! কাজ মিটলেই তো সবাই হাত ধুয়ে সাধু, মুখ লুকিয়ে মিলিয়ে যায় গলির অন্ধকারে। কিন্তু ওই কিছুক্ষনের জন্যে রাজা উজির উকিল সবাই সমান, কেউ পেশায় তো কেউ নেশায়।

আর ওই মেয়েটা? কেউ জানতে চায় না তার খবর। দিনে দিনে কষ্ট গুলো জমা হয় আর বিক্রি হয় টাকার কাছে। পেটের টান এমনই জিনিষ। শত আপত্তি স্বত্বেও “দোকান” যে তাকে খুলতেই হবে। এমনিটাই যে সমাজের বলে দেওয়া।

                   “ বেশ্যার আবার দুঃখ কিসের? ওরা তো টাকায় ভোলে…”



।। দুই ।।

ভিড়ে থিকথিক করছে বাস। সোমবার দিনের অফিস টাইম মানে বাকিটা বুঝে নিতে কষ্ট হয় না।  বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে, বাসের গেট, বাসের ভিতর; সব যেন থিকথিক করছে। মেয়েটা অফিস যাবে। বেসরকারি অফিসে চাকরি, একেই তো দেয় ওই কটা টাকা, তার ওপর আবার না যেতে পারলে কর গুনে বাদ পড়বে। তাই যেতে তো হবেই, সে যে ভাবেই হোক না কেন। প্রায় ১০-১২ মিনিট দাঁড়ানোর পর একটা বাস এলো, বাদুড়ঝোলা হয়ে। গেটে ঝুলে যাওয়া ছাড়া, লেট মার্কের হাত থেকে রক্ষে নেই। তাই উঠতেই হবে বাসে।

বাসের গেটের বাইরের জায়গাটা বড় ভালোলাগার জায়গা। কিন্তু সমূহ বিপদ, এই বুঝি হাত ছেড়ে যায়; এই বুঝি ধাক্কা লেগে গেল।তার ওপর আবার মেয়েদের ঝোলা বারন; দুর্বলের প্রতিমুর্তি হিসাবে যা ধরা দিয়েছে অনন্তকাল ধরে। সব কষ্ট দরজার বাইরে রেখেই ভেতরে ঢুকে আসতে হল, সব ভাল মন্দের বিচার না করেই। থিক থিকে ভিড় আর হাজার হাজার নিঃশ্বাসের মাঝে যেনো কোথাও একটা হারিয়ে গেছে মান সম্মান। এ কোনুই মারছে, তো ও কথা শোনাচ্ছে। কেউ আবার নোংরা ভাবে লোভ দিচ্ছে কিছু পাওয়ার আশায়। সুযোগ বুঝে কেউ আবার কেতাবি হালে কোমরটা একটু ছুঁয়ে নিয়েছে।

হঠাতই গেটের কাছের থেকে আওয়াজ এলো,

-ও দিদি, এই দোকানটা একটু সরান না। একাই তো আড়াই জনের জায়গা নিয়েছেন, আর কতোক্ষন এভাবে দাঁড়াবো?   
- সত্যি মাইরি, এই অফিসটাইমে কেনো যে মেয়েদের তোলে বাসে কে জানে। একাই দাঁড়াবে, আর কেউ দাঁড়াবে না যেন।

টিপ্পনিতো রোজকার ঘটনা, শুরু শুরুতে নাড়া দিলেও এখন গা পেষা হয়ে গেছে। ঘটনাটা একই কিন্তু মুখ গুলোই আলাদা। উত্তর দিতে মন চাইতো আগে, দিন দিন এ সেটাও আর নেই। সব উত্তেজনা ওই কানে গোঁজা হেডফোনটাই বয়ে নিয়ে চলে। চারি হাতের মধ্যে, আধ সেদ্ধ হয়ে মেয়েটা যখন অফিসে পৌছায় তখন হয়তো তার মান, ইজ্জত সব টুকুই ওই বাসের ভিড়ের মাঝে বন্ধক রেখে যায়, ইচ্ছার বাইরে গিয়ে, পেশার তাগিদায়।

কেউ কি আদৌ খবর নেয় মেয়েটি আজ ভিজে চুল মুছেছিলো কিনা? বা ভিড়ের মধ্যে কেউ কি তার পা টা মাড়িয়ে দিয়েছে?

                   “উহ, মেয়েদের আবার চাকরি করতে যাওয়ার কি আছে? ওটা তো বাড়তি ইনকাম”



।। তিন ।।

বিয়ে করে এনেছিলে ঘরে। চোখে লাগিয়ে ছিলে অনেক নতুন স্বপ্ন, সবই মেয়েলি স্বপ্ন। সেসবের প্রতি তোমার কোনও দায়িত্ব ছিলো না কখনো। তুমি শুধু শরীরের জন্যে আসতে আমার কাছে নেশায় মত্ত মাতালের মতো। প্রথমবার শরীর স্পর্শ করার সময় একরাশ জড়তা তোমায় অবশ করেছিল প্রায় ইতস্তত করেছিলে হাত বাড়াতে সেবার তুমি পারোনি আমায় ভোলাতে, আক্ষেপ ছিল বেশ অনেকখানি আদিম সত্যের হাতছানিতে পরের বারে অবশ্য সব হিসাব মিটিয়েছিলে সুদে আসলে। জড়তা কাটিয়ে ক্ষুধার্ত হায়নায় মতো, ঝাঁপিয়ে পড়েছো ওই ইঞ্চি মেপে চর্বি জমানো নাভির আশেপাশে, খানিকটা হাঘরের মতোই বলা চলে। খুব কানে লাগলো, তাই না? হ্যাঁ, হা-ঘরেই নেশার মতো বার বার কাছে আসতে চাইতে তুমি অমৃতস্বাদের খোঁজে কাছে আসা যাওয়ার মিথ্যে অভ্যাসে ভুলে আমি প্রেমে পড়েছি তোমার বোকার মতো

প্রথম প্রথম আঙ্গুলের ফাঁকে জমে থাকা ঘাম চেটে খাওয়া পোশাকি ভালোবাসায় আমি ভুলেছি,একবার না বারবার, নির্বোধের মতো অপরিণত ভালোলাগা গুলো বুঝতে দেয়নি একদিন ওই হাতের ঘাম মুছতে রুমালও ভিজে যাবে, কিন্তু অন্য কোনও হাত আর এগিয়ে আসবে না ক্রমেই হারিয়ে গেছি আমি ভালোবাসা থেকে এখন আর হাত ধরে বসে রোজকারের ওই প্যানপ্যানানি কথা শুনতে ইচ্ছা হয়না বারে বারে নোংরা ছুকছুকানি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে লোভীর মতো ওঁত পেতে বসে থাকো ওই অনুভুতির জন্যে এখন আর অনুভুতি আসেনা, অভ্যাস হয়ে গেছে কেমন তোমারও আজ কাল আর খিদে মেটে না তৃষ্ণা মেটাতে এখন পুরোটা লাগে মনের সব তৃষ্ণা এখন শরীরে চলে এসেছেশরীর ছুঁতে এই আকুলিটা বিরক্তিকে ডেকে আনতো, কিছুটা অধিকারের জন্ম দিয়েছিলো কুঁচকির আসে পাসে কাজ শেষ, আবার যে কে সেই বেড়েছে দূরত্ব, হারিয়েছে উত্তাপ, শীতের হাওয়ায় উলুবনে আজ মুক্ত ছড়াবারও কেউ নেই।

তোমার দেখানো এই ভালবাসা থেকেই নির্লজ্জের মতো একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে কথা গুলো দিনের পর দিন ভাঙ্গা টেপের মতো কানের কাছে বলে যেতাম আমি তুমি শুনতে, কিন্তু উত্তর দিতে না অভিব্যক্তিই জানিয়ে দিতো বাকিটা যে ভালোলাগা কে প্রশ্রয় দিয়ে শুরু করেছিলে কাছে আসা, যে আঘাতে করেছিলে ঘায়েল,সেই আঘাত দিয়েই আবার আমায় একলা করলে আঘাত দিয়েই মনের জোড়া,  আঘাতেই ভাঙ্গন ; কোনটাতেই আওয়াজ হয়নি, শুধু একটু রক্ত ঝরেছিলো

অনেকখানি বদলে গেছি আমি। তুমি না বললে হয়তো বাকি থেকে এই ভালোলাগার জায়গাটা। তোমার কথা আজকাল মনেই পড়ে না নেশার মতো লক লক করে নাভির আসে পাশে যে চর্বি গুলো চেটে বেড়াতে সেগুলোকেও বিদায় দিয়েছি আমি নিয়ম করে জিমে যাই, ঠিক যতটা নিয়ম করে রোজ সকালে স্নানের পর সিঁথিটা  রাঙ্গিয়ে তুলতাম জানি না তুমি কেমন আছো, তবে নির্ঘাত সেই লেনা দেনার কারবারেই মন দিয়েছো। করো করো, ওটা তোমারই হবে। (হাসি)

আমি সেদিন পারিনি যুঝতে এই সমঝোতার সাথে। দিনে দিনে জমতে থাকা মানসিক ক্ষতের কাছে দেনা পাওনা মিটিয়ে আমি সরতে চেয়েছিলাম। মাথার কালসিটে তবু সেরে যায়, মনের হ্যামারেজের যে কোনও টিংচার আয়োডিন নেই। আমি পেরেছি মনের ব্যাথায় অসুধ দিয়ে গলা সাধতে, আরো হয়তো অনেকে আছে যাদের রোজ রোজ সম্মান বেছতে হচ্ছে ৬-৭ টাকার হিসাবে বা কোনো এক অন্ধ গলির শেষে এক মিথ্যে স্বপ্নের কাছে। যুদ্ধ সবার আছে, কেউ তরোয়াল ধরে, কারো হাতে রাইফেল ;কেউ দাঁড়িয়ে নিষিদ্ধ পল্লীর মুখে কেউ আয়নার সামনে।

যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধ চলবে। নাই বা ঝরলো রক্ত, নাই বা হলাম বলি। বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী।।  



নশ্বর

আমি জানি নশ্বর আমি; একটা একটা দিন ফুরায় আর আমি গুনি; এই বুঝি বাজল সাইরেন; শরীরের কারখানায় যখন ধীরে ধীরে কর্মবিরতি আসতে থাকে হঠাৎ করেই একদিন ...