- বাবা, বাবা, আমার কেমন যেন অসুবিধা হচ্ছে।
- কেন? কি হয়েছে?
- আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
- সেকি…!! কেন?
- জানি না
ঠিক, মনে হয় অক্সিজেন লেভেলটা কমে গেছে?
- এই তো
সেদিন অক্সিজেন রিচার্জ করিয়ে দিলাম,
এর মধ্যেই কি করে কমলো।
- আসলে সেদিন আমাদের পাশের টাওয়ারের মাথায় যে নতুন স্টেডিয়ামটার ইনোগারেশান হলো,
সেটাতেই আমি সখ করে একটু খেলতে গেছিলাম। প্রায় ৪০
গজ মতো ছুটে এসে জোরে একটা শট মেরেছিলাম, তারপরেই আমার বিপি গেলো বেড়ে, জোরে জোরে নিঃশ্বাস পড়ছিলো;
তাতেই অনেকটা অক্সিজেন খরচা হয়ে গেছে।
- কিন্তু মাঠে নেমে আজ কাল কে খেলে? তোর গেম রুমের ব্যবস্থাটাও তো করে দিলাম।
- মাঠে তো নামিনি।
- তাহলে?? দৌড়লি কি করে আর বিপিই বা বাড়লো কি করে?
- আসলে এটা একটা নতুন টেকনোলজি। বিশাল জায়েন্ট স্ক্রিনে খেলা যায়। অগমেন্টেড রিয়েলিটির মতো,
কিন্তু অনেক অনেকটা আডভান্স। এখানে তুমি নিজের বডির এনার্জি নিজের প্লেয়ারের মধ্যে
ট্রান্সফার করতে পারো। তো সে ভাবেই আমি করতে গেছিলাম। তো অনেক খানি ছুটতে হয়েছে,
আর তাতে করেই আমার বেশি অক্সিজেন খরচা হয়ে গেছে।
- কি যে করিস না...!!!
দাঁড়া, সামনের পাম্প থেকে রিচার্জ করে দেবো। আর এই ভাবে চললে হবে না। একটু
কেয়ারফুলি চলিস পরের বার থেকে।
কথাগুলো এভাবেই ভেসে আসছিলো। এখনকার দিনে কেউ আর
মুখে কথা বলে না, যা যা কথা ভাবে সেই সব কথা গুলো মনে মনেই পাচার হয়ে যায়। অ্যাস্ট্রোনটদের মুখে যেরম
মাস্কের মতো থাকে, অনেকটা ঠিক সেরকম মাস্ক লাগানো হয় এখানে, ভেতরে হাজারটা সেন্সার। সব কথা, ইমোশান সবটুকুকে সেন্স করে নিয়ে মনে মনেই
কথা চালাচালি হয়ে যায়। সবাই ভীষণ ব্যস্ত, কারো কাছেই কথা বলার
সময় নেই।
(দুই)
পার্কে
বসে প্রেম করার ব্যাপারটা একদম নেই। পার্কই
নেই, তো আর বসা; তাছাড়াও প্রেম করতে গেলে তো কথা বলতে হবে, অতো সময় কই এখানে? সমস্ত
রকম ইমোশান গুলোকে সেন্সার ক্যাপচার করে নেয়, তার পর সেটা সেই ইপ্সিত মানুষটার
কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পুরো শহরটাই একটা নিউরাল নেটওয়ার্ক দিয়ে কানেক্ট করা।
মিনিটে মিনিটে স্নায়বিক উদ্দীপনাকেও ডেটাবেসে ভরে নেয়। ম্যামথ ডেটাবেস
ম্যানেজমেন্ট দিয়ে সব ব্যাপারটা দেখা শোনা করা হয়। এসব টেকনিকাল কথা না হয় থাক,
আসল ব্যাপার হলো এখনকার মানুষ জনের মধ্যে সেই মানবিক অনুভূতি গুলো আর নেই। সেদিন
কেই একটা কথোপোকথন শুনছিলাম,
-
আই...আই...আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে
ভালোবাসি।
-
আই অ্যাম নট কনভিনসড্।
-
আচ্ছা, তাহলে বলো আমায় কি করতে
হবে?
-
তোমার মনে এখনো ডাউট আছে।
-
নো, আই অ্যাম অ্যাবসোলুটলি ক্লিয়ার
অ্যাবাউট মাই ফিলিংস।
-
নো, ইউ আর নট।
-
কেন? ওয়াই আর ইউ টেলিং দিস?
-
কথাটা বলার সময় তোমার ডান কানের
পাতার টেম্পারেচার ২ ডিগ্রি বেড়ে গেছিলো, হার্টবিট সেই নর্মাল, ও না নর্মালের থেকে
২.৬৫ বিটস কম। আর ডান দিকের চোখের পাতাটা ১.৩৫ টাইমস/সেকেন্ড বেশি কাঁপছিল, ব্লাড
প্রেশার ১২০/৮০; আর সব থেকে বড় কথা এবারে তুমি কথা বলতে গিয়ে ফাম্বেল করেছো। তুমি
যখন কোনো -কিছু নিয়ে সিওর থাকো তখন ঝরঝর করে বলে দাও ৮৯ ওয়ার্ডস পার সেকেন্ড
স্পিডে।আমি লাস্ট মাসের তিনটে জায়গায় ট্রেস করেছি, তোমার স্পিড ছিলো অ্যারাউন্ড
৮৭-৯০। আজ হঠাত করেই স্পিডটা কমে ৮৪.৫ হয়ে
গেলো। ইস্ নট দিস ফিশি?
-
না, সেরম না ব্যাপারটা। বাট আই
অ্যাম টেলিং দ্যা ট্রুথ।
-
নো, ইট ইজ। প্লিস ডোন্ট ট্রাই টু
চিট মি।
-
AISBJH9986, প্লিজ লিসেন টু মি। আই অ্যাম ভেরি মাচ সিওর অ্যাবাউট ইট।
-
প্লিজ, কাট দ্যা ক্র্যাপ। আই কান্ট টেক দিস অল শিট।
-
প্লিজ ডোন্ট গো।
-
স্টপ ইট। আই কান্ট টেক দিস।
-
ও কে, গো টু হেল।
ব্যাস, ভবলীলা সাঙ্গ। দু মাস, চার দিন, ১৪ ঘন্টা, ২৫
মিনিট, ২৯ সেকেন্ড আর গুটি কিছু মিলি-মাইক্রো সেকেন্ডের বন্ধুত্ব ভেঙ্গে গেলো। এরম
চরম দুঃখের সময় কেই বা অতো স্টপওয়াচ নিয়ে মাপবে বলুন, ডেটাবেসে স্টোর আছে হয়তো।
পরে খুঁজে দেখা যাবে। তো আমার বন্ধুর সাথে তো এরম ঘটনা ঘটলো। বন্ধু মানে কিন্ত
আমরা কখনো মুখোমুখি দেখা করিনি। ওই খেলার সময় ওর আর আমার প্লেয়ারের ধাক্কা
হয়েছিলো। সেই থেকেই এক্সচেঞ্জে অফ ভাইব, এক্সচেঞ্জ অফ এনার্জি। সেটাই কম্পিউটারে
ফিড করিয়ে দেখা গেলো, আমার আর ওর মধ্যে ৮৮.৩২% কম্প্যাটিবিলিট আছে। ব্যাস, বন্ধু
হয়ে গেলাম। নিউরাল নেটওয়ার্ক স্পেশাল কলামে অ্যাড করে নিয়েছি ফ্রেন্ড হিসাবে।
আমাদের বেশ ঘন ঘনই কথ হয়, ওই ধরুন বছরে ৩-৪ বার মতো।
আর ওই
যে নাম্বারটা দেখলেন ওটা আসলে কোনো আলতু ফালতু নাম্বার না, ওটা আসলে নাম।এখানে নাম্বার ধরেই সবাই কে ডাকা হয়। কোনো নাম নেই আলাদা ভাবে। কনফিউশান যাতে না হয়, সেই জন্যেই। ডেটাবেস মেন্টেন করাটাও অনেক সোজা। সে যাই হোক, হাল আমলের এটাই ট্রেন্ড। আর অনেক আগে একটা কবিতার লাইন শুনেছিলাম, “আমার ছেলের বাঙলাটা ঠিক আসে না”, সেটারই লার্জার ভারশানটা এখানে দেখবেন। এখানে বাঙালি বলে তেমন ভাবে কিছু নেই, তবে কিছু কিছু মানুষের ডেটা নিয়ে বেশ অনেকটা আগে অবধি ব্যাকট্র্যাক
করে দেখা গেছিলো এদের অনেকে বাঙালি ছিলো, বাংলা
ভাষায় নাকি কথাও বলতো। তাদেরই
ডিসেন্ডেন্টগুলো এখন বাইনারি ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানেই না। বাংলা ভাষা আসা তো দুরের কথা, চিন্তা
ভাবনা গুলোও বাংলা ভাষায় আসেনা। শুধু
বাংলা বলে না, সবেরই এক দশা।
আমিই তো এখন বাঙলা লেখার নতুন সফটওয়্যারটা টেস্ট করতেই লিখছি এটা।
(তিন)
ল্যাবে
রিসার্চ করছি সেদিন; এই এয়ার
পার্টিকেলের কম্পজিশান নিয়ে বেশ অনেক দিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি। ৩-৪টে জার্নাল
পাবলিশ করে ফেলেছি ইতিমধ্যে। আজ কাল
কার কলেজে অ্যাডমিশান নেওয়ার যা সব ক্রাইটেরিয়া করে দিয়ে না, মানে জাস্ট অসহ্য। ৩টে জার্নাল পাবলিকেশান নাকি চাই চাই, নাহলে হেঁদি পেঁচি কলেজগুলোও মুছবেনা আপনাকে। তো যেটা বলছিলাম, সেদিন
কেস-স্টাডি করতে গিয়ে দেখি ২০১৭ সালের দিল্লির
আবহাওয়া নিয়ে বেশ অনেক কথাই লেখা আছে। ইন্টারনেটে সঙ্গে সঙ্গে ঘেঁটে অনেক ভিডিও পেলাম। দেখলাম ওই ধোঁওয়াশা নিয়েই মানুষের কি হতাশা। এক দিন নাকি এই গাড়ি চলবে, আর একদিন
নাকি ওই গাড়ি; আরো কত কি। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স নিয়েও তো মানুষের কাল ঘাম ছুটে যাওয়ার মতো অবস্থা। বেজার জোরে হেসে ফেলেছি বাপু, ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসতে পথ পেলাম না আর। (হা হা হা…) এই টুকু নিয়েই নাকি এতো…
শুনুন তাহলে…
আমাদের এখানে অক্সিজেন প্রায় নেই। ওই মাঝে মাঝে কিছু পাম্প রয়েছে। ওখান থেকেই রিচার্জ করে চালাতে হয়। দিনে দিনে তো হু হু করে দাম বাড়ছে। বাইরে বেরলেই আমরা মাস্ক পরে বেরই, যাতে
অক্সিজেনের অভাব না হয়। জল বলছেন…!!! আমাদের খাওয়ার মতো জল নেই। লিকুইড নাইট্রোজেন দিয়ে বডি কুল করে রেখে সেই বডির ওয়াটার কন্টেন্টকেই সারকুলেট
করি। নতুন করে জল ভরার জায়গা নেই। ভাবতে পারেন, এক প্যাকেট
বৃস্টির দাম ১৮০ টাকা(ততকালিন
মুদ্রায়)। এই কবি,গায়ক গুলো মাঝে মাঝে কেনে নিলামে। এসব না দেখলে নাকি লেখা বেরয় না, গান আসেনা। দিনে দিনে যা অবস্থা আসছে একটু ভালো মানের বৃষ্টি পেতে গেলে
আপনাকে নিলামে অংশ নিতে হবে। মানুষ
মানুষের সাথে কথা বলে না, মনের
কথা বলার আগেই পাওয়ার ব্যাক-আপ শেষ
হয়ে যায়, ব্যাস ঘুমিয়ে পরতে হয়। কথা বলার সময় নেই। পার্কে বসে প্রেম করার সময় নেই, পেসেন্স
নামের জিনিসটা তো কবেই বেচে দিয়েছে মানুষ। ভালোবাসা নেই, প্রেম
নেই, কিছু নেই। আসল জিনিষ, কারো সময়ই নেই। তাহলে এর থেকে আর খারাপ কি হতে পারে? তবুও দেখেছেন আমাদের এসব নিয়ে হাউ হাউ করতে,মাথা কুটে মরতে? দেখেননি
তো… কেনো জানেন? কারন আমাদের এসব করার মতোও সময়টা নেই। কে কি করলো, কি করলো না সেসবের থেকে আমি নিজে কি
করছি সেটা নিয়ে ভাবাটাই বেশি কাজের বলে মনে করি আমরা…
অন্যদের দিকে আঙ্গুল তুলে দিয়ে আমাদের জীবনটা কেমন দুর্বিসহ
করে দিলেন দেখুন তো… নিজের
কাজটা করলেই তো ঝামেলা মিটে যেতো… J
পুরোনো সিনেমা দেখার বেশ সখ আছে আমার। মাঝে মাঝে নিজের চার্জ বেঁচে গেলে আমি ওই সব সিনেমা দেখি। সেদিনই একটা সিনেমা দেখছিলাম “দ্যা অ্যাপোক্যালিপ্স বিগিন্স”, ২০৬৩ সালের সিনেমা। সেখানেই
দেখলাম কি ভাবে মানুষ নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মেরে আবার কালিদাসের কথা তুলে হাসে। মানে আজব স্পিসিস যাকে বলে। আমার ৮ জন্ম আগের যিনি ছিলেন তিনি নাকি বলতেন “পাগলেও নিজের ভালো বোঝে…”, কিন্তু
এই মানুষে বোঝে না। অবলীলায়
কেমন নিজের কবর খুঁড়ে গেছে আর অন্যকে দেখে হেসেছে। হা হা হা…
ছোট মুখে অনেক বড় কথা বলে ফেললাম, কিছু মাইন্ড করবেন না। আমি যাই আজ, নতুন কিছু ড্রিম আজ সিমুলেশানে বসানো
আছে। দেখি কি কি আউটপুট এলো। পরে আবার আসবো। ভালো থাকবেন… টাটা…
(সমাধি)
No comments:
Post a Comment