Saturday, 12 November 2016

(বেনামী)

                এক



ফ্লোরিডা,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র


ভারতীয় সময় তখন কটা বাজে মনে নেই, মার্কিন মুলুকে তখন বেশ ভালই রাত হয়েছে। তার ওপর আবার শনিবারের বাজার, পথঘাটে লোকজনও বিশেষ কম। সবাই ব্যস্ত তাদের উইক-এন্ড প্ল্যান নিয়ে।কেউ গেছে ক্লাবে,কেউ শপিং, কেউ কেউ বারে। রাস্তাঘাটে লোক জন তেমন নেই,সবাই মাথা গলিয়েছে ওই স্ট্রিপ ক্লাব,বার এসব জায়গায়। রাস্তাটা এখন কিছু মার্কা মারা লোকের পাল্লায়। মার্কা মারা লোক বলতে কি সেটা বোঝাই যাচ্ছে,আলাদা করে আর বলার প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না।

সুজয় আজ বাড়িতে। একা একা বোসে বসে সারা সপ্তাহের রান্না করছে। রবিবারের রাত গড়ালেই আব্র শুরু হবে দৌড়। ভালো ভাবে খাওয়া নাওয়ার সময়ও পাওয়া যাবে না। তাই আগে ভাগে কাজ সেরে রাখছে। সপ্তাহভর শুধু গরম হবে। এই করেই কাটছে তার দিন,নয় নয় করে ৮-১০ মাস হয়েই গেলো। সপ্তাহের শেষে একটা ক্যাফে তে ওয়েটারের চাকরি করে সে। সবে সবে কাজ সেরে ফিরে তাই এখন নিজের কাজ গোছানয় মন দিয়েছে। তবে আজ কেমন যেন কাজে মন নেই।কাজ করতে ইচ্ছা করছে না। কি যে করে,কাজ তো তাকে করতেই হবে। তাই অগত্যা নিজের ইচ্ছার অবাধ্য হয়েই কাজ করছে। এক বছর আগে হলে এই সময়ই এরম মন করলে এক হাঁক পেড়ে মা কে বলতো এটা করে দাও তো, ওটা করে দাও তো। এখন আর সেই উপায় নেই। এই বিদেশ বিভূঁইএ এখন সে একা,তাই একা হাতে সামাল দিতে হবে।

আস্তে আস্তে পেঁয়াজ কাটছিল সুজয়। চোখের জল যে গড়িয়ে আসবে তাতে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এই দিন জলটা কেমন যেন অন্যরকম ছিল। শুধু যে পেঁয়াজ কাটার জল তা নয়,হয়ত কোথাও কোনও দুঃখ জমে রয়েছে ওই জলের পিছনে।খুব মা এর কথা মনে পড়ছিল সুজয়ের। মা কে ফোন করতে পারছিল না,ফোনে টাকা নেই। মাসের শেষ,টানাটানি। কাল ক্যাফে থেকে মাসের পেমেন্টটা পেলে টাকা ভরিয়ে ফোন করবে সুজয়,এমনটাই প্ল্যান তার। কিন্তু মাঝ খান থেকে বাদ সেধেছে ওই মনটা।কেমন অবুঝ হয়ে গেছে। সুজয় নিরুপায়,কিছু করতেও পারছে না। তাই মুখ বুজে সহ্য করে চলেছে অনবরত। চোখের জলটা হয়তো তারই দ্যোতক। মা কে বড় মিস করছে সে।

এর মধ্যেই হঠাত ফোনটা বেজে উঠলো। অরিন্দম ফোন করেছে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো অরিন্দম সুজয়ের সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু।স্কুল কলেজ অফিস সব সময় সুজয়ের সাথে আঠাকাঠির মতো লেগে ছিল।সুজয়ের প্রানের বন্ধু। রিঙ্কু কাকিমা,মানে সুজয়ের মা তো অরি(অরিন্দমের ডাক নাম)-কে নিজের ছেলে বলে মেনে নিয়েছিলেন।সবাই কে বলতেন আমার দুটো ছেলে সু(সুজয়ের ডাক নাম) আর অরি। অরি ফোন করেছে দেখে মনটা একটু খুশি তে ভরে উঠলো সুজয়ের। এক প্রকার লাফিয়ে উঠে ফোনটা ধরে এক গাল হেসে বললো,

-         কিরে সালা,এত দিন কোথায় ছিলি? একবার ফোন করতে পারোনি জানোয়ার?   

-         আরে না রে,আর বলিস না, এতো কাজের চাপ যে আর সময় পাই নি।

-         সেই,আমার জন্যে আর সময় কি করে হবে,সব টাকা তো শালা ওই কাজলের পেছনে খরচা করছো।আমায় ফোন করার সময় আর কি করে হবে।

-         (থম থমে গলায়) ওসব এখন থাক না। পরে কথা হবে না হয় এসব নিয়ে।

-         অরি,কি হল রে? এরম শোনাচ্ছে কেন তোর গলাটা? কি হয়েছে? বল আমায়।

-         সু,মাসিমা খুব অসুস্থ। কাল রাতে হসপিটালে ভর্তি করেছি। এখন আই.সি.ইউ তে আছেন।আটচল্লিশ ঘন্টা না কাটলে কিছু বলা যাবে না।

কথা টা শোনার পর ফোনটা হাত থেকে এক প্রকার পড়েই যাচ্ছিলো সুজয়ের।সামনের মেঝেটায় ধপ করে বসে পড়েছে সে।সামলাতে পারছে না নিজেকে কোনভাবেই। অনেক ভুলিয়ে যে চোখের জল কে আটকেছিল সেই জল এখন আর বাধ মানছে না। মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরনো তো দুরস্ত।

-         সু, এই সু, তুই ঠিক আছিস? কিরে আওয়াজ দে না,তুই ঠিক আছিস?

-         হ্যাঁ…হ্যাঁ…হ্যাঁ… আমি ঠিক আছি। আমি…আমি ঠিক আছি। মা এর কি হয়েছে বল? অরি প্লিজ বল মা এর কি হয়েছে। আমায় কিছু লুকিয়ে যাস না অরি,বল আমায়,প্লিজ বল। ডাক্তার কি বলেছে বল আমায়। এই অরি,বল না কেন চুপ করে আছিস?

-         সু, সু একটু শান্ত হ। ডাক্তার সময় চেয়েছে আটচল্লিশ ঘন্টা।তার পর বলতে পারবে।

-         হ্যালো...হ্যালো্‌…হ্যালো…


টক্‌…টক্‌…টক্‌ করে ফোনটা কেটে গেলো। তার পর পাগলের মতো সুজয় চেস্টা করে যেতে লাগলো । কিন্তু আর ফোন লাগলো না। তাই একটা ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়ে গেলো সুজয়। কিছু বলার ক্ষমতা তো আর নেই। শুধু একরাশ নীরবতা ভরিয়ে দিল ওই চার দেওয়ালের ব্যবধান কে। পাশের সিঙ্ক থেকে জলের ফোঁটার আওয়াজ টা এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। সামনের ওভেনে বসানো ঝোলটা যে ফুটে ফুটে কখন জ্বলে পুড়ে গেছে সেটা টেরই পায় নি সুজয়। দৃষ্টি নিবদ্ধ ওই খোলা জানলাটার দিকে।
জানলার কাঁচে ভেসে আসছে শুধু মায়ের ছবি,আর ফেলে আসা সেই স্মৃতিগুলো। সাথে রয়েছে চোখের জল,আর ওই ঘরভর্তি নীরবতা।

                                               
                                                উফফ, কি দুর্ভেদ্য এই নীরবতা…



ঘরে ফেরার টানটা কেমন যেন রয়েই গেল,সুজয় বাড়ি ফিরতে চায়,জানে না আদৌ সে ফিরতে পারবে কি না... দোটানা...



                                                                        দুই



টাকি,পশ্চিমবঙ্গ…………………২৫ বছর আগে


            বহুদিন আগে কার কথা। সময়টা ১৯৯০ সাল। মাসটা ঠিক মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে শীতকাল ছিল। তার ভেতরেই সুজয়ের মা বাবার বিয়ে হয়েছিল,টাকিতে। ১৯৯০ সালে প্রেম করে বিয়ে মানে একটা বিশাল ব্যাপার। প্রায় মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হতো। তার মধ্যেই সুজয়ের মা বাবা দুজন। সমাজ অনেকটা সেকেলে তখনও। তার ওপর সুজয়ের বাবা টাকির কাছে একটা ছোট গ্রামের ছেলে। তাই আধুনিকতা আশা করাটাই একটা দুঃসাহসিক ব্যাপার। গ্রামের সেকেলে মানুষ জন এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি। নানান অছিলায় সুজয়ের মা কে অত্যাচার করতো। কথা শোনানো,টিপ্পনি,কটুক্তি এগুলো তো খুব সাধারন ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। পারেনি,সুজয়ের মা সেটা মেনে নিতে পারেনি। গ্রাম ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। সুজয়ের মা বাবা চলে আসে কোলকাতায়। সুজয় তখন গোকুলে বেড়ে উঠছে। ছোট গ্রাম থেকে কোলকাতায় এসে একা সামলে নেওয়াটা সত্যিই খুব কঠিন কাজ। তবুও সুজয়ের মা বাবা আস্তে আস্তে সাজাছিলেন নিজেদের ছোট্ট পৃথিবী। এমন সময় সুখের দিন এলো।

            সুজয়। আলো করে এলো মায়ের কোলে। নর্থ কোলকাতার গিরিশ পার্ক লাগোয়া ছোট ভাড়া বাড়িটায় তখন খুশির স্রোত। উচ্ছলতা কেমন যেন আগল ভেঙ্গে নেমে এসেছে বাড়িটায়। বাবার কলের আদর পেয়ে পেয়ে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে সুজয়। স্কুলেও ভর্তি করা হল,বেশি দূরে না,বাড়ির কাছেরই একটা মন্টেসরী স্কুলে। যেদিন প্রথম স্কুলে যায় লাল আর বাদামি চেক চেক জামা সাথে ব্যাগিস দেওয়া প্যান্ত,গলায় বাদামি টাই। কি সুন্দর যে দেখাচ্ছিল যে কি বলবো। একটা ফ্রেমে এখনও আটকে আছে সেই মুহুর্তগুলো। সুখের দিন গুলো কিভাবে যে কেটে যাচ্ছিল সেটা বোঝাই যায় নি।

            কিন্তু সুখ বেশি দিন থাকলো না। ছোটবেলায় মেধাবি হওয়ার দরুন সুজয়ের বাবা একটা বড় প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরি করতেন। কাজের সুত্রে এদিক ওদিক যেতে হতো। এবার একটা বড় সুজগ এলো। বিদেশ যাওয়ার। কিন্তু সুজয়ের বাবা যেতে চান নি। সুজয়ের মা,মানে রিঙ্কু কাকিমাই যেতে উতসাহ দেন। কাকিমার ছোট থেকে খুব ইচ্ছা ছিল তার কাছের মানুষ দের মধ্যে কেউ একজন যেন বিদেশে যায়। কাকু সুযোগ পেতেই আর সেটা কে ফেলতে দিতে চান নি। একদিন রাতে কাকু কাকিমার কথা হচ্ছে

-         আচ্ছা,তুমি কেন চাও আমি বাইরে যাই? এখানে তো ভালো আছি,বেশ ভালো মাইনেও পাচ্ছি,কোনও অসুবিধা তো নেই,তাহলে কেন বলছ?

-         আরে বাবু,তুমি বুঝছ না। বাইরে গেলে তোমার কতো নাম ডাক হবে বলো ত,সবাই কতো চিনবে। আমি তো বুক বাজিয়ে বলবো আমার ইয়ে আমেরিকায় থাকে।

-         তো? আমি চলে গেলে তোমার মন খারাপ হবে না? তোমরা তো এখানে একা হয়ে যাবে,তোমাদের কে দেখবে?

-         আরে বাবুমশাই,আমাদের কিচ্ছু হবে না। আমরা ঠিক থাকবো। আর মন খারাপ হলে তোমার কাছে চলে যাবো হুস করে। J এবার লক্ষ্মী সোনার মতো ব্যাগটা গুছিয়ে নাও তো।

-         কেন পাঠাতে চাইছো আমায়? আমি কি এতই বোঝা হয়ে গেছি?

-         সশশশ…খবরদার এসব কথা বলবে না। আই লাভ ইউ…

সেই রাতের কথা বার্তার কটা দিন পরই কাকু প্লেন ধরেছিলেন আমেরিকার। কিন্তু সেই প্লেন আর মাটি ছুঁল না। কাকিমার মুখের হাসিটা মুখেই মিলিয়ে গেলো। কাকু চলে গেলেন,ফেলে রেখে গেলেন বেশ কিছু সম্পত্তি,অনেক সমবেদনা,একটা সদ্য বাড়তে চাওয়া সংসার।

                                    শুরু হল এক নতুন সংগ্রাম…

            কাকিমা বাপের বাড়ি ফিরে যেতে চান নি। আসলে প্রথম জীবনে প্রেম করে বিয়ে করাটা কে কেউই মেনে নিতে পারেন নি বলে তাকে বের করে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে। সেই থেকেই চাপা অভিমান জমে আছে মনের মধ্যে। কাকু মারা যাওয়ার পরও কাকিমা সেটা আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছিলেন। সাথে ছিল সু। সু কে ঘিরেই বেড়ে উঠেছিল কাকিমার সাজানো বাগান। টাকা পয়সা নিয়ে অভাব কখনও তেমন ভাবে একটা বোধ করেন নি কাকিমা। কারন কাকুর উপার্জন বেশ ভালো মতই ছিল,কিন্তু ওই যা হয়,একটা রানিং ইনকাম না থাক্লে।তাই খুব বেশি বেগ পেতে না হলেও বেস ভালো ভাবেই কাটত। কাকিমা বেশ শিক্ষিত ও ছিলেন,তাই পাড়ার ওই কটা ছেলে মেয়ে কে পড়িয়ে বেস কিছু টাকাও আসতো আর সময়্টাও কেটে যেত। আর সব থেকে বড় ব্যাপারটা হল কি সু সরকারি স্কুলে পড়তো। তাই পড়াশোনার খরচা ছিল না বললেই চলে। আর তা ছাড়াও তখন কার দিনে এই সব কোচিং ক্লাসের এতো মাতামাতি শুরু হয় নি। স্কুলের স্যারেদের মধ্যে যথেষ্ট আন্তরিকতা তখনও বর্তমান ছিল। তাই ওই টিউশান যাওয়ার ব্যাপারটা প্রায় ছিল না বললেই চলে। খরচা ও কম। এই করেই কেটে ছিল অনেক গুলো বছর।

            সুজয় কোলকাতার একটা নাম করা সরকারি স্কুলে পড়তো। আচ্ছা নামটা বলেই দি। সুজয় হিন্দু স্কুলের ছাত্র ছিল। সব সময় ফার্স্ট না হতে পারলেও প্রথম পাঁচের বাইরে যায় নি কখনও সুজয়। স্কুলের সব টিচার তাকে খুব ভালোবাসত। সেটাই স্বাভাবিক অবশ্য। শুধু এটাই না। সে সমস্ত স্কুলে খুব ফেমাস ছিল। কারনটা তাহলে বলা যাক। এ হেন কাজ নেই যেটা সুজয় করতে পারত না। পড়াশোনা না হয় বাদ দেওয়া গেলো। পড়াশোনা ছাড়াও ছবি আকা,ছবি তোলা, কবিতা লেখা,গান লেখা,নাটক লেখা,অভিনয় সব কিছুতেই সে সিদ্ধহস্ত। ছবি আঁকার হাতটাতো দারুন ছিল। বেশ কয়েকবার বড় বড় জায়গায় প্রদর্শনীও হয়েছিল ওর। শুধু এই না। অত্যন্ত দায়িত্ববান ছেলে হিসেবেও ভীষণ নামডাক তার। কারও মাথা ফেটেছে সুজয় কে ডাকো,ওই দিন এই প্রোগ্রাম হবে,নাও সুজয়কে ডাকো। মানে সহজে বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না একদমই যে সুজয় কতটা ফেমাস ছিল স্কুলে। পড়াশোনায় তো একটা প্রাইজ তার বাঁধা। প্রতি বছর কিছু না কিছু বিষয়ের জন্যে সুজয় প্রাইজ পাবেই। স্কুলের গর্ব হিসাবে সুজয়কে দেখত সবাই। আমরা সবাই ওর স্কুলের বন্ধু,আমরাও ওর পাসে থেকেছি,কিন্তু কখনও কেউ খেয়ালই করেনি। আসলে সূর্যের পাশে ১০০,২০০,১০০০ যত ওয়াটের আলোই লাগানো হোক না কেন সেগুলো ম্রিয়মাণই লাগে। আমরা সবাই সুজয়ে আলোয় জ্বলতাম, ওর ছায়ায় নিভতাম। সবার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতাম আর বুকটা কেমন আনন্দে ভরে যেত। সুজয় আমাদেরই বন্ধু যে,। J 

                                                                       


                                                           


                                                                        তিন



ফ্লোরিডা,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাত পেরিয়ে...


            সেদিন রাতে সুজয়ের আর ঘুম হয়নি। না হওয়াটাই স্বাভাবিক। মা ওদিকে আই.সি.ইউ তে আর ছেলের চোখে ঘুম যে আসবে না সেটাই কাম্য। বাড়ির ওই বারান্দাটায় শাটার দেওয়া জানলাটায় মাথা রেখে সারা রাত কি সব ভেবে গেছে সুজয়। ভাবতে ভাবতেই চোখের পাতা গুলো ভারি হয়ে কখন যে একে অন্যও কে আঁকড়ে নিয়েছে সেটা বোঝাও যায় নি। শাটারের উপর মাথাটা আস্তে করে জায়গা করে নিয়েছে। ওই শাটারের অপার দিয়েই সারা রাত বয়ে গেছে কতো জল। সারা রাত ধরে বৃষ্টি হয়েছে বাইরে। সুজয় বুজতেও পারেনি। বৃষ্টির আওয়াজ সুজয়ের হৃদয় বিদীর্ণ করে মনের গহীনে প্রবেশ করতে পারেনি। হা সুজয় কেঁদেছে। চোখে জল কতোটা এসেছে সেটা তো বুঝতে দেয় নি,উদাসিনতা দিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু হৃদয়টা যে কেঁদেছে সেটা বুঝতে পারা যায়।

            ঘুম ভাঙলো ওই ভোরের দিকটায়। সময়টা মনে নেই। চোখ খুলেই দেখলো বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ওই সময় ফ্লোরিডা তে এরম বৃষ্টি কিন্তু হয় না। খানিক অকাল বর্ষনের মতো। মনটা কু গেয়ে উঠলো। ভারতীয় সমাজে শিশুদের শিক্ষা হোক আর নাই হোক মনের মধ্যে কুসংস্কারটা কেমন করে জানি জন্ম নিয়ে নেয়। তার পর মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে সুজয়। এসব জিনিসের প্রতি বিশ্বাসের থেকেও ভয়টাই বেশি। সুজয়ও ব্যতিক্রমী না। চেস্টা যে একান্ত করেনি তা নয়, কিন্ত ওই যে “যাহা প্রোথিত আছে মনের গহীনে তাহাকে এতো সহজে দূর করিবে কেমনে? “ তার পর প্রিয়জনের কিছু হলে সেখানে তো আর কোনও কথাই নেই। মানুষ কেমন ভাবে যেন আরও দুর্বল হয়ে যায়।

            সারা রাত জানলা খোলা ছিল, ঝাপটা এসে কিছু কিছু জিনিস ভিজিয়ে দিয়েছে। আর মেঝেটাও জল থই থই করছে। চোখ খুলেই এরম অবস্থা দেখে সুজয় যে খুশি হবে না সেটাই স্বাভাবিক। আস্তে আস্তে উঠে সেই জল গুলো কে মুছলো সুজয়। তার পর ভিজে জিনিস গুলো কে শুকনো করতে দিতে গিয়ে সুজয় দেখে ওর মাথাটা কেমন ভার হয়ে রয়েছে। সারা রাত ঘুম হয়নি,তার পর নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই হয়তো শরীর খারাপ। বেশিক্ষণ টানতে পারলো না এই ভাবে। সুজয়ের খুব ঘুম পাচ্ছিলো, কিন্তু শুতেও মন চাইছে না।আবার শরীরটাও দিচ্ছে না। এই দোটানার মধ্যে সুজয় ঠিক করলো একটু শুয়েই নেবে। নাহলে সারা দিন কোনও কাজ হবে না। বিছানায় গিয়ে আস্তে করে শুয়ে পড়লো ও। আলো গুলো জলছে। না না ভুল বললাম,বারান্দার আলোটা জলছে। ঘরে ওই ফুটল্যাম্প টাকে জ্বালিয়ে ওই একটা অন্ধকারের মাঝে ঘুমিয়ে গেলো সুজয়। সব নিস্তব্দ। নীরবতাটা আজ কেমন যেন কুরে কুরে খাচ্ছে, কাঁদাতে চাইছে। অসহ্য হয়ে উঠছে এই নীরবতা। বাইরের বৃষ্টির ফোঁটা গুলো একে একে প্রহর গুনে চলেছে, নীরবতায় ছেদ পড়ছে।

                                                            টুপ্‌…টুপ্‌…টুপ্‌… 


(এরপর চলছে...) 


(বাকি অংশের জন্যে চোখ রাখুন এই ব্লগের ওপরে। পরবর্তী পর্ব আসতে চলেছে কিছু দিনের ভেতর। যেহেতু এটি একটি অসমাপ্ত লেখা তাই কোনও নামকরন করতে পারলাম না, দুঃখিত) 

4 comments:

নশ্বর

আমি জানি নশ্বর আমি; একটা একটা দিন ফুরায় আর আমি গুনি; এই বুঝি বাজল সাইরেন; শরীরের কারখানায় যখন ধীরে ধীরে কর্মবিরতি আসতে থাকে হঠাৎ করেই একদিন ...