Monday, 19 December 2016

বিসর্জন

              পুজো আসছে পুজো আসছে করে করে এই এক মাস বেশ ভালই কাটছিলো। দেখতে দেখতে দশমীটাও চলে এলো। মানে ঠিক মতো বোঝার আগেই পুজো শেষ। আবার প্রতীক্ষার একটা বছর। মানে জাস্ট ভালো লাগে না। পুজোর সামারি কি এটা জিজ্ঞাসা করলে কি বলবো বুঝতে পারাটা খুব মুশকিল। ষষ্ঠী অবধি অফিস, তারপর সপ্তমী থেকে বৃষ্টি। মানে কাদা প্যাচ প্যাচ আর হাঁফ ওঠা গরম। তার ওপর সারে সারে মানুষের ভিড়। মানে এই সব কিছুর চক্করে পড়ে ঠাকুর দেখাই হলো না। গাঁটে গুনে একটা, তার পরেই ক্ষেমা দিয়েছি আমি। খাবার জায়গায় গিয়েও স্বস্তি নেই। সব জায়গায় এক হাল। যাই হোক, পুজো শেষ, তাই দুঃখ প্রকাশ করাটা একটা নৈতিক কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে সব বাঙ্গালির। আমিও সেই দলেই নাম লিখিয়েছি, নাহলে আমার আভিজাত্য নিয়ে আবার টানাটানি পড়ে যাবে। মুখে যাই বলি না কেন মনে মনে এই জ্যাম, ভিড় ভাট্টা থেকে আমি নিস্কৃতি চাইছি। ব্যাস। পুজোটা এই বৃষ্টিটাই কেমন যেন মাটি করে দিলো।
              একটা বছর কোথাও বেরতে না পেরেই এই অবস্থা। তাজ্জব লাগে পাড়ার মৃনাল জেঠ্যু কে দেখে। বছরের পর বছর সেই এক রুটিন। পুজো বলতে নতুন কিছুই নেই। শুধু একটু বাড়ির আলো গুলো জ্বেলে রাখা, ব্যাস এটুকু। বেশ কয়েক বছর ধরেই মৃনাল জ্যেঠুর স্ত্রী কণিকা জ্যেঠিমা অসুস্থ,শয্যাশায়ী। ছেলেও চাকরির কারনে বাইরে থাকে, পুনেতে। তাই বাড়িতে একা একাই থাকা আরকি। জ্যেঠিমার তো ওই ঘরটায় খালি ,বাকি সারা বাড়িটাতেই ছায়া সঙ্গী হিসাবে কেউ আর নেই। ছেলে নেই,দেখা সাক্ষাৎ ওই তিন চার মাসে একবার। ফোনে কথা হয় মাঝে মাঝে, তবে কাঁধে এসে হাত রাখার মতো কেউ নেই। তাই একাকিত্ব কেমন যেন কাছে টেনে নেয়। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। কিন্তু জ্যেঠুকে দেখে বোঝার উপায় নেই বিন্দু মাত্র। লাস্ট ৬-৭ বছর রিটায়ার করেছেন, কিন্তু এখনও তার কোনও ছাপ পড়েনি। জ্যেঠু ডালহৌসি চত্বরের বেশ নাম করা একটা ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্ছ ম্যানেজার ছিলেন। তাই আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ থাকার কথা নয়। বেশ জাঁকিয়ে অফিস ও করেছে অনেক বছর ধরে। ছেলেটা অত ভালো ছিলো না পড়াশোনায় কিন্তু কালে কপালে একটা চাকরি জুটিয়ে নিয়েছে। তবে এতো টাকা পয়সা থাকলেও গুমোর ছিলো না একদম। আমরা মাটির মানুষ বলতে যা বুঝি জ্যেঠূ একদম সেরকম। খুব সাদা মাটা,হাসি খুশি মানুষ জ্যেঠু। জ্যেঠিমার একটু গুমোর ছিলো বটে কিন্তু আমাদের কাছে তেমন প্রকাশ দেখিনি, লোক মুখে যেটুকু শোনা আর কি। সেরিব্রাল পালসি হওয়ার পর থেকেই কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে সব কিছু। এক কালে জমজমাট বাড়িটায় এখন আর সেই প্রানচ্ছলতা নেই। পিন পড়ার আওয়াজটাও কেমন যেন রেকর্ড হয়। 
জ্যেঠিমার টুকটাক শরীর খারাপ লেগেই থাকতো। মানে ওই আর কি যা হয়, জ্বর জ্বালা আর সেই বাঙালি ফেমাস “অম্বল”। কিন্তু এটা কেমন যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো। জ্যেঠুর কেমন লেগেছিলো সেটা বোঝার বা বলার মতো ভাষা আমার নেই, তবে পুরো পাড়ার লোক কেমন যেন আকাশ থেকে পড়েছিলো। দু তিন বছর আগে সেরিব্রাল পালসির নাম লোকের কাছে অনেক টা হিব্রু ভাষার মত ছিলো। গাঁটে গোনা কয়েক জন,যারা খুব বই টই পরে, বা সিনেমা টিনেমা দেখে তারা ছাড়া এই নামটা তেমন কারো জানা ছিলো না। রোগটা প্রথম জানা যায় স্টিভেন হকিন্সের কাছ থেকে। স্টিভেন হকিন্স এই রোগের শিকার ছিলেন। প্রথম প্রথম আমিও বুঝতে পারিনি,পরে সিনেমা দেখে জানলাম আসল ব্যাপারটা কি, কেন এই রোগ হয়,কি উপসর্গ এই সব আর কি। রোগের কিনারা করতে পারলেন না কোনও ডাক্তার। দিন দিন আরো বিছানায় মিশে যেতে থাকলেন জ্যেঠিমা। সেই থেকেই সঙ্গিনী ২৪ ঘন্টার আয়া আর জ্যেঠু। মাথার পাশের ওই জানলাটা কেমন যেন স্বর্গের মতো হয়ে গেছে। ওটাই আকাশ, ওটাই বাতাস, ওটাই চিলেকোঠা,ওটাই মুক্তি। বেশ চলছে তো দু বছর ধরেই। 
পাড়ার পুজোটা মৃনাল জ্যেঠুর বাড়ির পাশেই হয়। মানে ওই যে জানলাটার কথা বললাম ওই জানলার থেকে একটু দুরেই। ঘাড় উঁচিয়ে দেখলে অনায়াসেই ঠাকুর দেখতে পাওয়া যাবে,মানে একদম ঝক ঝক করে, এমনই দুরত্ব । পাড়ার পুজোয় আলো বাঁধা থেকে মাইকে গান বাজানো সব কিছুর হিসাব কষে রাখে ওই ঘরটা। জ্যেঠু এক সময় পাড়ার পুজোর মাথা ছিলেন। এখন বয়স বেড়েছে, তার ওপর জ্যেঠিমার এরম অবস্থা, তাই সেই সব বোঝা এখন জ্যেঠু অন্যের কাছে ট্রান্সফার করে দিয়েছে। তবে এখনও পুজো মন্ডপে আসেন, সম্ভব মতো সাহায্যও করেন, বাড়িতে বউ সামলে যতটুকু করা যায় আর কি। তবে কিছু হোক না হোক প্রতিবারে সন্ধিপুজো আর বিসর্জনের দিন জ্যেঠু কে মন্ডপে দেখা যাবেই। এবার তো আবার হাই কোর্টের আদেশ মতো সন্ধ্যে ৬টার আগে ঠাকুর জলে ফেলতে হবে,তাই বেলা বেলিই ঠাকুর ভাসান দেওয়ার পালা। এই ৩টে-সাড়ে ৩টে নাগাদ করে বরন শুরু হলো। নিয়ম মতো এবারেও হাজির জ্যেঠু। বরন মিটতে মিটতে ওই বেজে গেলো পৌনে পাঁচটা-পাঁচটা। সব সেরে ঠাকুর লরি তে তুলে দিয়ে জ্যেঠু বাড়ি ফিরে গেলেন। তার পর হাত মুখ ধুয়ে, ঠাকুরের পায়ে ঠেকানো ফুলটা নিয়ে জ্যেঠিমার মাথায় ঠেকিয়ে দিতে গেলেন,
– ওহ, তুমি ফিরে এসেছো?
– হুম, এই তো ঠাকুর লরি তে তুলে দিয়ে এলাম। দাঁড়াও মাথায় ফুলটা ঠেকিয়ে দি তোমার।
– ধুর, এসব করে আর হবে কি?
– কি হবে মানে? প্রতি বছরই তো আমি করি। এমন ভাবে বলছো যেন আগে কখনো দেখোনি।
– না না। সেটা বলিনি। বললাম এসব করে আর কি হবে? আমার তো হয়েই এলো… (শুকনো হাসি)
– এই এসব বাজে কথা বলা থামাও তো। দেখি হাতটা সরাও মাথা থেকে।
– (হাত সরিয়ে) আচ্ছা এবার ঠাকুরের জন্যে কত বড় লরি এসেছিলো?
– (মাথায়,বুকে ফুল ছুঁইয়ে দিতে দিতে) ওই যেমন আসে প্রতিবার, ওরমই এসেছিলো আর কি। আগে তো দেখেইছো।
– আচ্ছা। ঠাকুরটা ঠিক কতটা বড় হয়েছিলো?
– এবার একটু বড়ই ছিলো। মানে অন্যবার যেমন হয় তার তুলনায় একটু বড়ই ছিলো।
– ওহ। তার মানে এবার আর লরিতে ঠাকুর তোলার পর জায়গা পাওয়া যায় নি। ইশশ্…
– হ্যাঁ, ওই ছিলো আর কি। এতে তোমার ইশশ করার কি হলো?
– না এমনি। জায়গা থাকলে আমার খাটটাও তুলে দিতে পারতে তো। মায়ে ঝিয়ে এক সাথে বিসর্জন হয়ে যেতো। (দুঃখচাপা হাসি একটা বিকট আওয়াজ করে)
– কনি, আবার?? আবার তুমি এসব আবোল তাবোল কথা বলছো তো?
– আরে আরে তুমি চটছো কেন? একবার ভেবে দেখোতো কতো সুবিধা হতো তোমার। এই জ্বালা বয়ে বয়ে আর কতদিন চলবে বলো। আমারও তো তোমার কথা ভাবতে হবে নাকি। (দেঁতো হাসি)
– কনি তুমি খুব ভালো করে তো জানো এসব কথা আমার ভালো লাগে না। তাহলে কেন বলো এসব?
– আচ্ছা বাবা, ঘাট হয়েছে আমার। এবার খুশি? (হাসি)
– হ্যাঁ। (হাসি)
– দেখলে তো বাবুটা এবারও এলো না। কি যে এতো কাজ করে কে জানে।
– হ্যাঁ সেই তো। বলেছিলো চেষ্টা করবে। কিন্তু হয়তো কাজের চাপে আটকে গেছে তাই আসতে পারে নি।
– কাজের চাপ না ছাই। ওসব আমার জানা আছে। এমনি আসে নি গো,এমনি।
– এমনি? কি যে বলছো না…
– আরে হ্যাঁ গো। এমনি আসেনি। এই আধ মরা মায়ের মুখ দেখতে এসে কে পুজোটা মাটি করতে চায় বলো? (হাসি) বলতে পারতে তোর মা মরে গেছে, তাহলে হয়তো একবার সময় করে দেখতে আসতো। আমার ও দেখা হয়ে যেতো। (হা হা হা করে হাসি)
– কনি, এবার মনে হয় আমার কথা না বাড়ানোই ভালো। কথা বাড়লেই তুমি আবার এসব বলতে শুরু করবে, আর আমার সেগুলো ভালো লাগবে না। তুমি না আমার দিকটা একদম ভাবোই না।
– আরে না না চাটুজ্জ্যে মশাই। সময় থাকতে শুধরে যাও।
– শুধরে যাও…!! মানেটা কি?
– সবাই বেলাবেলি পথ দেখে নিয়েছে বা নিচ্ছে। তুমিও এবার পথ দেখে নাও। বাবুও দেখে নিলো। তুমি আর কতোদিন মায়া আঁকড়ে পড়ে থাকবে।
– তুমি কি আমার কোনও কথা শুনবে না? এসব কথা বলেই যাবে??

রাগে যখন জ্যেঠু মুখটা ঘুরিয়ে নিয়েছে, জ্যেঠিমা তখন আস্তে আস্তে হাতটা রাখলো জ্যেঠুর হাতের ওপর। কতো ইমসান, কতো কথা কেমন যেন মুহুর্তের মধ্যে বদলে গেলো এই হাত থেকে ওই হাত। কেউ বুঝলো না, শুধু ওরা।

– কেন এতো ভালোবাসো?
– জানি না। কলেজে পড়ার সময় ও বার বার জিজ্ঞাসা করতে, তখনো তো উত্তর দিতে পারিনি। আজ কি করে দেবো তাহলে?
– হুম। (নিশ্চুপ)
– কেন বলো ওসব কথা?
– জানি না। তোমায় ছেড়ে যেতে যে মন চায় না। কিন্তু… (মুখ ফিরিয়ে, চোখের কোণটা চকচক করছে)
– কে যেতে বলছে? আর কোনও কিন্তু না। কোথাও যেতে হবে না তোমায়।
– আচ্ছা এবার ঠাকুরে কাছে কি চাইলে?
– সে বলতে আছে নাকি কাউকে?
– অমনি? আমায় তো বলতেই পারো, আমি না তোমার বেটার হাফ? (হাসি)
– তাহলে তোমার তো জানাই উচিত আমি কি চাইতে পারি…!!
– কি? (বিস্ময়ে)
– সেটাই যেটা প্রতিবারে চাই।
– (হাসি)
কথায় কথায় খেয়াল নেই যে কখন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। মন্ডপের আলোর সাথে জ্যেঠিমার হাসি তে কেমন যেন ঘরটা আলোয় ভরে গেছে। মন্ডপ থেকে কখন যে এসে দধিকর্মা দিয়ে গেছে জানতেই পারেনি ওরা কেউ। ওরা হাসছে। প্রান খুলে আবার হাসছে ভবিষ্যতের চিন্তা কে দূরে রেখে একটু কিছুক্ষনের জন্যে প্রান খুলে হাসছে। 
মায়ের বিসর্জন যে হয় না কখনো।
একটু দধিকর্মা রেখে দিলাম আপনা দের জন্যেও, সময় মতো খেয়ে নেবেন। শুভ বিজয়ার প্রীতি শুভেচ্ছে আর আন্তরিক অভিনন্দন। সারাবছর ভালো কাটুক, রসেবশে হাসি খুশি তে আনন্দে কাটুক আপনাদের প্রিয়জনের সাথে।
মিস্টিমুখ… (হাসি) 

Saturday, 19 November 2016

(বেনামি) (দ্বিতীয় পর্ব)...


(প্রথম পর্বের পর...) 


                                                      টুপ্‌…টুপ্‌…টুপ্‌…


বেশ অনেকক্ষন পরে সুজয় উঠলো। কি হলো জানবে বলে সে ফোনটাকে হাতে তুলে নিলো। অরিন্দমের নাম্বারটায় ফোন করলো। কাল সারা রাত ফোনে পাওয়া যায়নি, আজ ও পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তেজনায়,উদ্বেগে এক প্রকার পাগল হয়ে যাওয়ার যোগাড় সুজয়ের। বহুক্ষন চেষ্টার পর ফোনটা পাওয়া গেলো। রিং হচ্ছে। কিন্তু বেজে বেজে কেটে গেলো। ভারতীয় সময় তখন রাত দুটো-তিনটে মতো হবে। অরিন্দম ঘুমাচ্ছে ভেবে সুজয় আর ফোন করলো না। মনটা কে মানিয়ে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করে যেতে লাগলো সুজয়। কিন্তু হাজার হোক মা তো। মন মানে না কিছুতেই। বিছানা ছেড়ে উঠে সুজয় মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।

            রোজকার কাজ কর্ম সারছে সুজয়,তার মধ্যেই ফোনটা বেজে উঠলো। আজ রবিবার। তাই সে সারা সপ্তাহের কাজ গুছোছিল। কিন্তু মনটা তখনও ফোনের দিকে আটকে। তাই ফোন বাজতেই সেটা কান এড়িয়ে যায় নি। প্রায় ওঁত পাতা শিকারির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ফোনটা ধরলো সুজয়। ওটা অরিন্দমেরই ফোন।
-         কি রে,ফোন করেছিলি?

-         হ্যাঁ রে। কাল হঠাত করে ফোনটা কেটে গেলো আর তার পর সারারাত কিছুতেই কানেক্ট করতে পারলাম না। খুব চিন্তা হচ্ছে রে। বল না, মা কেমন আছে? ডাক্তার দেখেছে? কি বললো?

-         সেরম কিছু এখনও অবধি বলতে পারেনি। ৪৮ ঘন্টা সময় চেয়েছে। দেখি কি বলে তার ভেতরে। আসলে বুঝতে পারছিস তো মাথার পিছনে লেগেছে। তাই চট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

-         মাথার পেছনে? মানে? ঠিক কোন জায়গাটায় লেগেছে?

-         আরে মাথার পিছনের দিকটায়। মানে ওই ব্রম্ভতালুর থেকে একটু নিচে।

-         শিট্‌।

-         কি হল রে?

-         মা এর ওই জায়গাটায় আর একবার লেগেছিল। মা তার পর থেকেই একটু সাবধানে চলতো। ইশশশ… আবার লাগলো ওই একই জায়গায়। এবার আমিও মা এর কাছে নেই। কি যে হবে মা এর। বল না মা ভালো হয়ে যাবে তো? মা এর কিছু হবে না তো?

-         সু, সু, সু একটু শান্ত হ। এখন আমাদের শান্ত থাকতেই হবে। মাথা ঠান্ডা না রাখতে পারলে আরও গোলমাল হয়ে যাবে। তুই একটু শান্ত হ।

-         কি করে বলছিস শান্ত হতে। একবার আমার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখ। বুঝবি। শালা এতো দূরে পড়ে আছি আমি,সবাই কে ছেড়ে , না পারছি মা কে দেখতে, না পারছি মায়ের কাছে যেতে। আমার ব্যাপারটা বুঝছিস অরি? একবার ভেবে দেখ… (কান্না)

-         সু, আমি সব বুঝতে পারছি রে। কিন্তু তুই যদি এভাবে ভেঙ্গে পড়িস তাহলে আমি কাকিমা কে কিভাবে সামলাই বল। আরে বেশি কিছু হয় নি। বেশি চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি না? J

-         সত্যি বলছিস তো? মা এর কিছু হবে না তো?

-         হ্যাঁ রে বাবা… আমার ওপর এইটুকু ভরসা নেই। যা এখন চোখ মুখটা ধুয়ে কিছু খেয়ে নে দেখি। আমি জানি কাল রাত থেকে কিছু খাওয়া হয় নি তোর। আমি ও যাই এবার হস্পিটালের দিকটায়। ভোর তো হয়েই এলো। আজ আবার কাকিমার রিপোর্ট আনার কথা।

-         রিপোর্ট…!! কিসের রিপোর্ট রে?

-         আরে কাল বলতে ভুলে গেছিলাম। কাকিমাকে ডাক্তার এম.আর.আই করতে দিয়েছেন। তারই রিপোর্ট দেবে আজ। সেটা আনতে যেতে হবে। রিপর্টের ওপর ভিত্তি করেই তো আসল চিকিতসা শুরু হবে। আমি রিপোর্ট এনে তোকে জানাবো। যদি এখন না জানাতে পারি তোকে পরে বেলার দিকে আমি জানিয়েই দেবো।

-         আচ্চা রে। প্লিজ মা এর একটু খেয়াল রাখ। প্লিজ। আমি দেখি এদিকটায় যদি কিছু ম্যানেজ করতে পারি।

-         আচ্ছা রে ঠিক আছে।

-         আর শোন, টাকা পয়সা কেমন কি খরচা হচ্ছে আমায় বল। আমি সম্ভব হলে পাঠাচ্ছি।

-         থাক ওসব কথা। তুই ওখানে কিভাবে কষ্ট করে থাকিস সেটা কি আমি জানি না? তুই বেশি না বোকে তোর দিকটা দেখ। আমি এদিকটা সামলে নেবো।

-         সত্যি রে অরি,তুই না থাকলে আজ কি হতো…

-         (কথা শেষ করতে না দিয়ে) ও এখন এসব বলবি তো? তাহলে আমি ফোনটা রাখলাম। অনেক কাজ পড়ে আছে,সেগুলো করবো। তুই বাজে বোকা বন্ধ করে কাজ কর নিজের।আমি এখন রাখলাম। বাই…

-         হ্যাঁ রে বাই…জানাবি মনে করে।

-         একদম রে। চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।


ফোনটা রেখে দিলো সুজয়। বন্ধুর কোথায় আশ্বস্ত হলেও মনের ভেতর কিন্তু সেই খটকাটা কাজ করতেই থাকলো। মাথার পিছনে লেগেছে। সুজয় জানতো মাথার পিছনে লাগাটা বিশেষ ভালো লক্ষন না। কারন ওখানে মা এর একটা চোট ছিল আগে। সেই অনেক বছর আগে। সুজয় কখনও দেখেনি। কিন্তু শুনেছিল মা এর মুখ থেকেই। মাথার পিছনে চোট সুজয় কে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো বহু বছর আগে।মনের মধ্যে ভেসে আসতে লাগলো বছর ২৪ আগের কিছু ভয়াবহ ঘটনা।






                                                       চার




গিরিশ পার্ক, উত্তর কোলকাতা………… ২৪ বছর আগে



                    সময়টা ওই ১৯৯০-৯১ মতো হবে। কাকু কাকিমার বিয়ে হয়েছে বেশ কিছুদিন হলো। গোকুলে তখন বেড়ে উঠছে সুজয়। কাকিমার তখন ৮ মাস মতো । নর্থ কোলকাতার ভাড়া বাড়িটায় উঠেছে বেশ কিছু দিন হল। যে বা যারা নর্থ কোলকাতার বাড়ি গুলোতে গেছে তারা বুঝতে পারবে যে ওগুলো ঠিক কতো টা ক্লস্ট্রোফোবিক। মানে ঘুপচি ঘুপচি ঘর, বাড়ি লাগোয়া দেওয়াল, এই ছাদ থেকে ওই ছাদে চলে যাওয়ার সুবিধা, ছোট্ট এক ফালি উঠোন, চৌবাচ্চা এসব গুলোই নর্থ কোলকাতার বাড়ি গুলোর পরিচয়বাহী। খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে বাইরে থেকে এসে হট করে মানিয়ে নেওয়াটা ঠিক কতোটা কষ্টদায়ক। কিন্তু মানুষটা যখন সুজয়ের মা আর বাবা তখন এই কথা গুলো খুবই বোকা বোকা বলে মনে হয়। মানিয়ে গুছিয়ে বেশ সুন্দর সংসার করছিলেন ওনারা। কিন্তু সুখ বেশি দিন টেকে না। তো এমন এক গরমের দুপুরে সুজয়ের মা, রিঙ্কু কাকিমা ছাদে উঠেছেন। কিছু জামাকাপড় শুকনো করতে দিতে। আর ওই জামার জল গুলো সিঁড়ি ময় পড়েছিল। ব্যাস তাতেই আছাড় খেয়ে কাকিমা একদম সোজা গড়াতে গড়াতে নিচে। ব্যাস। সে তো এক হুলস্থুল কান্ড। কাকুও বাড়িতে ছিলেন না। তার ওপর এই পোহাতি অবস্থায় এমন বিপত্তি। তখন ফোনের প্রাদুর্ভাবও তেমন হয় নি। কাজেই খবরও দেওয়া যায় নি কাকু কে। শেষ মেষ পাড়ার লোকেরাই ধরে করে ডাক্তার ডেকে আনে। তার পরামর্শেই কাকিমা কে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। সময় মতো কাকুকে  খবরও করা হয়। মানে সে কি বিপত্তি। একটা সময় তো ডাক্তার জবাব দিয়েই বলেছিল যে বেবি কে আর বাঁচানো যাবে না। সেই তখন কাকিমার মাথার পেছনে খুব বড় রকমের চোট হয়েছিলো। সেই চোটের দরুন কাকিমা বেশ সতর্কও থাকতেন । কেন এতোটা সতর্ক থাকতেন সেটা অবশ্য কখনও জানায় নি সুজয় কে। সুজয় এটা জানতে পেরেছিল তার বাড়িওয়ালি জেঠিমার কাছে। সে তখন মা কে জিজ্ঞাসাও করে যে এই কথাটা কি সত্যি, কিন্তু শিশু মন কে ভুলিয়ে কাকিমা  কোনও ভাবে কথাটা এড়িয়ে যায়। কিন্তু সেই কথাটা আজ ও মনে আঁচড় কেটে রেখেছে সুজয়ের। আজ আবার যেন সেই পুরনো স্মৃতিই চাগাড় দিয়ে উঠলো।

                     মাথার সেই চোট যে কতোটা গুরুত্বপুর্ণ ছিল সেটা পরবর্তী কালে ভালোভাবে টের পাওয়া গেছিলো। ওই অংশটা আসলে কাকিমা চুল দিয়ে ঢেকে রাখতেন তাই তেমন বোঝা যেত না। কিন্তু ওই চুলের নিচে শোয়ানো থাকতো কি ভয়াবহ চেহারা। আস্টে পৃষ্ঠে তেঁতুলে বিছের মতো সেলাই চলেছে ওই কাটার ওপর দিয়ে। দেখলেই মনে হবে আসে পাশের চামড়া গুলোর মধ্যে তীব্র বিবাদের জন্যে তারা আলাদা হতে চাইছে, আর একটা সম্প্রদায় কেমন যেন জোর করে দুই পক্ষকে কাছে আনার চেষ্টা করছে। যখন পারছে না তাদের এক সাথে বাঁধার চেষ্টা করছে। এই টানাটানির মাঝে ওই কলহের অন্তর্মহলে থাকা সব বেনো জলগুলো লালচে দাঁত বের করে হাসছে হাঁ করে। সে কি ভয়াল দৃশ্য। সুজয় আস্তে আস্তে যখন বড় হল তখন বুঝতে শুরু করলো মা কেন এলো চুল রাখতে পছন্দ করে না। খুব ভালো মনে পড়ে সুজয় ক্যামেরা নিয়ে খালি মা এর ছবি তুলতে চাইতো। কিন্তু কাকিমা কখনও তুলতে দিতেন না। মাঝে মাঝে দিলেও চুল বেঁধে। একদিন সুজয় বলেছিল,
                              
-         মা,তুমি ওই নীল শাড়িটা পরো তো।

-         কেন রে?

-         আরে পরো না,পরতে বলছি যখন।

-         দাঁড়া বাপু। একটু তর দে আমায়।

-         আচ্ছা, তাড়াতাড়ি নাও।

কাকিমা সেজে শাড়ি পরে এলো। তার পর মা কে সাজতেও বললো সুজয়। কাকিমা সাজার পর সুজয় ছবি তুলতে চাইলো।
-         হতচ্ছাড়া ছেলে,এই জন্যে আমায় সাজালি? \

-         হ্যাঁ। :-P

-         না আমি ছবি তুলবো না আর। আমার ছবি তুলতে হবে না আর।

-         আরে,এতো কষ্ট করে যখন সাজলেই তখন ছবিটা তুলেই নি না।

-         না তুলবি না বাবু। মার খাবি খুব।


                   কিন্তু কে আর কথা শোনে। কাকিমার ছবি তুলেই ছাড়ল।  কিন্তু সুজয়ের এবার ইচ্ছা মা এর খোলা চুলে ছবি তুলবে। কিন্তু কাকিমা রাজি হলেন না। সুজয় অনেক করে বললেন, কিন্তু কাকিমা কোনও ভাবেই রাজি হলেন না। তাই সুজয়ের আর ওই এলোকেশি ছবি তোলা হলো না। কথায় কোনও ভাবে বুঝতে না দিলেও মাথার ওই চোটের কারনেই কাকিমা এলোকেশি হতে চাইতেন না। কারনটা কখনও জানতে পারিনি আমরা কেউ,এমন কি সুজয়ও না। তাই একটা আলটপকা আন্দাজ সবাই করতাম। হয়তো এলোকেশী হলে মাথার চুলের ঘনত্ব কমে যায়,তাই মাথার শাঁস দেখা যায়। মাথার ভেতরের ওই রুপকথাটা সহজেই লোক চোখের মনীহার হয়ে উঠবে সহজেই। তাই সব কিছু এড়াবার জন্যেই কাকিমা ওটা কে লুকতে চাইতেন ওই বিপুল একটা খোঁপার আড়ালে। এটা আমাদের ধারনা ছিল,সুজয়েরও। এর পর কতো কথা লুকিয়ে রেখেছে ওই খোঁপার জাল।


            এটা একটা বেশ ছোট কথা। কাকিমা ওই মাথার সেলাই নিয়ে যে কতো ভুগেছিলেন তার কোনও হিসাব নেই। মাঝে মাঝেই কোনও ভাবে ওই জায়গায় হাত লাগলে কাকিমা মাথা ঘুরে পড়ে যেতেন। কতক্ষন অচৈতন্য অবস্থায়, মুখ দিয়ে মাছি গলে যেত। সুজয় কিছু কিছু জানতো, কিছু আবার অজানাও রয়ে গেছে। ওই মাথার ব্যাথা যে সত্যি কতো ভোগাতো তার আঁচ কখন লাগতে দেন নি সুজয়ের গায়ে। শুধু একবার মনে পড়ে , তখন সুজয় দের বাড়ির চিলেকোঠায় ওঠার জন্যে একটা সিঁড়ি বানানো হলো। বহু বছর আগের সিঁড়িটা অকেজো হয়ে আছে। তাই সুজয় একটা নতুন করে বানালো। সেই হাল আমলের ফ্যাশান ঘোরানো ঘোরানো সিঁড়ি। সিঁড়িটার একটা খুব খারাপ ব্যাপার হলো বাইরের দিকে বের করা থাকে আর অনাবৃত। মানে ওই সিড়ির ধারের খোঁচা খোঁচা অংশটা বাইরের দিকে থাকে। তাই একটু অসাবধানে চলা ফেরা করার সময় মাথায় ওই কোনা টা লাগলেই আর দেখতে নেই,কেল্লা ফতে। এখানেও সেই একই ব্যাপারটা হলো।

            কাকিমা ছাদে কিছু শুকনো করতে দিতে গেছিলেন। তো সেটা আনতে গিয়ে যখন সিড়ির পাকদন্ডী বেয়ে নিচে নামছিলেন তখন একটা অল্প হাওয়া তে হাত থেকে একটা জিনিস নিচে পড়ে যায়।আর এতেই যত বিপত্তি। সাধানরত সিড়ির নিচেটা একটু নোংরাই থাকে ভালভাবে পরিস্কার করা হয় না তার উপর ছাদের সিঁড়ি হলে তো কথাই নেইঝড় জল বৃষ্টি এসবের প্রাদুর্ভাবে সিড়ির তলাটা বেশ শ্যাওলা মতো হয়েই ছিল,তবে এটা শুকনো শ্যাওলা কিন্তু তাও ওই ধুলো যাতে না লাগে তাই কাকিমা ধড়মড় করে নিচে নেমে এসে তুললেন দেখলেন যে তেমন কিছু না লাগলেও কিছু জায়গায় ধুলো লেগেছে ব্যাস,পরম যত্নে ধুলো গুলো ঝাড়তে ঝাড়তে কাকিমা উঠতে গেলে বেশ বেখেয়ালেই মাথাটা ঠক করে লাগলো ওই মুখ উঁচু করে বের করে থাকা সিড়ির কোনাটায়। একে রামে রক্ষে নেই,তার উপর সুগ্রীব দোসর। সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন।  


(পরবর্তী পর্বের জন্যে চোখ রাখুন এই ব্লগের ওপর। যেহেতু এটি অসমাপ্ত লেখা, তাই কোনও রকম নামকরন করা সম্ভব হলো না। দুঃখিত।। ) 

Monday, 14 November 2016

ব্যবধান

একলা পথে হাঁটতে গিয়ে হারিয়েছি বহুদূর,
সাগর তটে ভেজা বালির পায়ের ছাপের আশায়
হাঁটতে হাঁটতে হারিয়েছি সেই এক অজানার নেশায়
জমিয়েছি শত ভাঙ্গা ঝিনুকের কুঁচি;
আগলে রেখে কোলের কাছটাতে
স্বপ্ন গুলো আপন মনে বাঁচে;
ভয় নেই কো, লাগবে না কোনো আঁচড়
বুক চিতিয়ে রুখে দেবো রক্তবীজের দাপট ;
ওটাই শুধু সত্যি আমার, সেঁধানো ভালোবাসার শিকড়।
                                              
অবস্থানটাও বদলে গেছে তোমার আর আমার
তুমি যখন দক্ষিন, আমি তখন উত্তর,
বদলে গেছি আমরা দুজন রেললাইনের মতো
পাশাপাশি যদিও হাঁটি, কিন্তু রেখেছি ব্যবধান
মিলবো না আর কোনও দিন কভু, মিলবে না এ জীবন
দেখবো কেবল আড় চোখেতেই, থাকবো নিরুত্তর।
শিহরন আজও হারায় আমায় শিশির ভেজা রাতে
যখন তোমার কান্না আমায় কাঁদায় অবহেলে,
জমতে থাকা শিশির গুলোয় কাঁপতে থাকো তুমি
কাঁপতে কাঁপতে ফিসপ্লেটটা বাড়িয়ে দিয়েছি আমি।

সকল কথাই রয়ে যাবে আড়ালের আবদারে,
সরে গেছি আজ আমরা দুজন অবহেলার অনুরোধে,
ঝিনুক গুলো লুকিয়ে আছে স্বপ্নের বালুচরে
সময় পেলে খুঁজে দেখিস একটু অবকাশে;
থাকবো হয়তো বহুদুরে সীমানা নেই যেথায়
মুখের কথা মুখেই রবে নিশ্চুপ জিজ্ঞাসায়,
থাকবি তুই, থাকবো আমি অন্যও রকম ভাবে
ভালোবাসা আজ পথ হারাবে অন্ধগলির মাঝে।

কথায় কথায় ভুলেই গেছি রয়েছে বলার বাকি ,
আমাদের সেই বাকি থাকা গল্প গুলো নিয়ে
এখনও অনেক কথা রটে, শুনি না শুধু আমরাই ।।  :-) 

Saturday, 12 November 2016

(বেনামী)

                এক



ফ্লোরিডা,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র


ভারতীয় সময় তখন কটা বাজে মনে নেই, মার্কিন মুলুকে তখন বেশ ভালই রাত হয়েছে। তার ওপর আবার শনিবারের বাজার, পথঘাটে লোকজনও বিশেষ কম। সবাই ব্যস্ত তাদের উইক-এন্ড প্ল্যান নিয়ে।কেউ গেছে ক্লাবে,কেউ শপিং, কেউ কেউ বারে। রাস্তাঘাটে লোক জন তেমন নেই,সবাই মাথা গলিয়েছে ওই স্ট্রিপ ক্লাব,বার এসব জায়গায়। রাস্তাটা এখন কিছু মার্কা মারা লোকের পাল্লায়। মার্কা মারা লোক বলতে কি সেটা বোঝাই যাচ্ছে,আলাদা করে আর বলার প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না।

সুজয় আজ বাড়িতে। একা একা বোসে বসে সারা সপ্তাহের রান্না করছে। রবিবারের রাত গড়ালেই আব্র শুরু হবে দৌড়। ভালো ভাবে খাওয়া নাওয়ার সময়ও পাওয়া যাবে না। তাই আগে ভাগে কাজ সেরে রাখছে। সপ্তাহভর শুধু গরম হবে। এই করেই কাটছে তার দিন,নয় নয় করে ৮-১০ মাস হয়েই গেলো। সপ্তাহের শেষে একটা ক্যাফে তে ওয়েটারের চাকরি করে সে। সবে সবে কাজ সেরে ফিরে তাই এখন নিজের কাজ গোছানয় মন দিয়েছে। তবে আজ কেমন যেন কাজে মন নেই।কাজ করতে ইচ্ছা করছে না। কি যে করে,কাজ তো তাকে করতেই হবে। তাই অগত্যা নিজের ইচ্ছার অবাধ্য হয়েই কাজ করছে। এক বছর আগে হলে এই সময়ই এরম মন করলে এক হাঁক পেড়ে মা কে বলতো এটা করে দাও তো, ওটা করে দাও তো। এখন আর সেই উপায় নেই। এই বিদেশ বিভূঁইএ এখন সে একা,তাই একা হাতে সামাল দিতে হবে।

আস্তে আস্তে পেঁয়াজ কাটছিল সুজয়। চোখের জল যে গড়িয়ে আসবে তাতে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এই দিন জলটা কেমন যেন অন্যরকম ছিল। শুধু যে পেঁয়াজ কাটার জল তা নয়,হয়ত কোথাও কোনও দুঃখ জমে রয়েছে ওই জলের পিছনে।খুব মা এর কথা মনে পড়ছিল সুজয়ের। মা কে ফোন করতে পারছিল না,ফোনে টাকা নেই। মাসের শেষ,টানাটানি। কাল ক্যাফে থেকে মাসের পেমেন্টটা পেলে টাকা ভরিয়ে ফোন করবে সুজয়,এমনটাই প্ল্যান তার। কিন্তু মাঝ খান থেকে বাদ সেধেছে ওই মনটা।কেমন অবুঝ হয়ে গেছে। সুজয় নিরুপায়,কিছু করতেও পারছে না। তাই মুখ বুজে সহ্য করে চলেছে অনবরত। চোখের জলটা হয়তো তারই দ্যোতক। মা কে বড় মিস করছে সে।

এর মধ্যেই হঠাত ফোনটা বেজে উঠলো। অরিন্দম ফোন করেছে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো অরিন্দম সুজয়ের সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু।স্কুল কলেজ অফিস সব সময় সুজয়ের সাথে আঠাকাঠির মতো লেগে ছিল।সুজয়ের প্রানের বন্ধু। রিঙ্কু কাকিমা,মানে সুজয়ের মা তো অরি(অরিন্দমের ডাক নাম)-কে নিজের ছেলে বলে মেনে নিয়েছিলেন।সবাই কে বলতেন আমার দুটো ছেলে সু(সুজয়ের ডাক নাম) আর অরি। অরি ফোন করেছে দেখে মনটা একটু খুশি তে ভরে উঠলো সুজয়ের। এক প্রকার লাফিয়ে উঠে ফোনটা ধরে এক গাল হেসে বললো,

-         কিরে সালা,এত দিন কোথায় ছিলি? একবার ফোন করতে পারোনি জানোয়ার?   

-         আরে না রে,আর বলিস না, এতো কাজের চাপ যে আর সময় পাই নি।

-         সেই,আমার জন্যে আর সময় কি করে হবে,সব টাকা তো শালা ওই কাজলের পেছনে খরচা করছো।আমায় ফোন করার সময় আর কি করে হবে।

-         (থম থমে গলায়) ওসব এখন থাক না। পরে কথা হবে না হয় এসব নিয়ে।

-         অরি,কি হল রে? এরম শোনাচ্ছে কেন তোর গলাটা? কি হয়েছে? বল আমায়।

-         সু,মাসিমা খুব অসুস্থ। কাল রাতে হসপিটালে ভর্তি করেছি। এখন আই.সি.ইউ তে আছেন।আটচল্লিশ ঘন্টা না কাটলে কিছু বলা যাবে না।

কথা টা শোনার পর ফোনটা হাত থেকে এক প্রকার পড়েই যাচ্ছিলো সুজয়ের।সামনের মেঝেটায় ধপ করে বসে পড়েছে সে।সামলাতে পারছে না নিজেকে কোনভাবেই। অনেক ভুলিয়ে যে চোখের জল কে আটকেছিল সেই জল এখন আর বাধ মানছে না। মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরনো তো দুরস্ত।

-         সু, এই সু, তুই ঠিক আছিস? কিরে আওয়াজ দে না,তুই ঠিক আছিস?

-         হ্যাঁ…হ্যাঁ…হ্যাঁ… আমি ঠিক আছি। আমি…আমি ঠিক আছি। মা এর কি হয়েছে বল? অরি প্লিজ বল মা এর কি হয়েছে। আমায় কিছু লুকিয়ে যাস না অরি,বল আমায়,প্লিজ বল। ডাক্তার কি বলেছে বল আমায়। এই অরি,বল না কেন চুপ করে আছিস?

-         সু, সু একটু শান্ত হ। ডাক্তার সময় চেয়েছে আটচল্লিশ ঘন্টা।তার পর বলতে পারবে।

-         হ্যালো...হ্যালো্‌…হ্যালো…


টক্‌…টক্‌…টক্‌ করে ফোনটা কেটে গেলো। তার পর পাগলের মতো সুজয় চেস্টা করে যেতে লাগলো । কিন্তু আর ফোন লাগলো না। তাই একটা ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়ে গেলো সুজয়। কিছু বলার ক্ষমতা তো আর নেই। শুধু একরাশ নীরবতা ভরিয়ে দিল ওই চার দেওয়ালের ব্যবধান কে। পাশের সিঙ্ক থেকে জলের ফোঁটার আওয়াজ টা এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। সামনের ওভেনে বসানো ঝোলটা যে ফুটে ফুটে কখন জ্বলে পুড়ে গেছে সেটা টেরই পায় নি সুজয়। দৃষ্টি নিবদ্ধ ওই খোলা জানলাটার দিকে।
জানলার কাঁচে ভেসে আসছে শুধু মায়ের ছবি,আর ফেলে আসা সেই স্মৃতিগুলো। সাথে রয়েছে চোখের জল,আর ওই ঘরভর্তি নীরবতা।

                                               
                                                উফফ, কি দুর্ভেদ্য এই নীরবতা…



ঘরে ফেরার টানটা কেমন যেন রয়েই গেল,সুজয় বাড়ি ফিরতে চায়,জানে না আদৌ সে ফিরতে পারবে কি না... দোটানা...



                                                                        দুই



টাকি,পশ্চিমবঙ্গ…………………২৫ বছর আগে


            বহুদিন আগে কার কথা। সময়টা ১৯৯০ সাল। মাসটা ঠিক মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে শীতকাল ছিল। তার ভেতরেই সুজয়ের মা বাবার বিয়ে হয়েছিল,টাকিতে। ১৯৯০ সালে প্রেম করে বিয়ে মানে একটা বিশাল ব্যাপার। প্রায় মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হতো। তার মধ্যেই সুজয়ের মা বাবা দুজন। সমাজ অনেকটা সেকেলে তখনও। তার ওপর সুজয়ের বাবা টাকির কাছে একটা ছোট গ্রামের ছেলে। তাই আধুনিকতা আশা করাটাই একটা দুঃসাহসিক ব্যাপার। গ্রামের সেকেলে মানুষ জন এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি। নানান অছিলায় সুজয়ের মা কে অত্যাচার করতো। কথা শোনানো,টিপ্পনি,কটুক্তি এগুলো তো খুব সাধারন ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। পারেনি,সুজয়ের মা সেটা মেনে নিতে পারেনি। গ্রাম ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। সুজয়ের মা বাবা চলে আসে কোলকাতায়। সুজয় তখন গোকুলে বেড়ে উঠছে। ছোট গ্রাম থেকে কোলকাতায় এসে একা সামলে নেওয়াটা সত্যিই খুব কঠিন কাজ। তবুও সুজয়ের মা বাবা আস্তে আস্তে সাজাছিলেন নিজেদের ছোট্ট পৃথিবী। এমন সময় সুখের দিন এলো।

            সুজয়। আলো করে এলো মায়ের কোলে। নর্থ কোলকাতার গিরিশ পার্ক লাগোয়া ছোট ভাড়া বাড়িটায় তখন খুশির স্রোত। উচ্ছলতা কেমন যেন আগল ভেঙ্গে নেমে এসেছে বাড়িটায়। বাবার কলের আদর পেয়ে পেয়ে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে সুজয়। স্কুলেও ভর্তি করা হল,বেশি দূরে না,বাড়ির কাছেরই একটা মন্টেসরী স্কুলে। যেদিন প্রথম স্কুলে যায় লাল আর বাদামি চেক চেক জামা সাথে ব্যাগিস দেওয়া প্যান্ত,গলায় বাদামি টাই। কি সুন্দর যে দেখাচ্ছিল যে কি বলবো। একটা ফ্রেমে এখনও আটকে আছে সেই মুহুর্তগুলো। সুখের দিন গুলো কিভাবে যে কেটে যাচ্ছিল সেটা বোঝাই যায় নি।

            কিন্তু সুখ বেশি দিন থাকলো না। ছোটবেলায় মেধাবি হওয়ার দরুন সুজয়ের বাবা একটা বড় প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরি করতেন। কাজের সুত্রে এদিক ওদিক যেতে হতো। এবার একটা বড় সুজগ এলো। বিদেশ যাওয়ার। কিন্তু সুজয়ের বাবা যেতে চান নি। সুজয়ের মা,মানে রিঙ্কু কাকিমাই যেতে উতসাহ দেন। কাকিমার ছোট থেকে খুব ইচ্ছা ছিল তার কাছের মানুষ দের মধ্যে কেউ একজন যেন বিদেশে যায়। কাকু সুযোগ পেতেই আর সেটা কে ফেলতে দিতে চান নি। একদিন রাতে কাকু কাকিমার কথা হচ্ছে

-         আচ্ছা,তুমি কেন চাও আমি বাইরে যাই? এখানে তো ভালো আছি,বেশ ভালো মাইনেও পাচ্ছি,কোনও অসুবিধা তো নেই,তাহলে কেন বলছ?

-         আরে বাবু,তুমি বুঝছ না। বাইরে গেলে তোমার কতো নাম ডাক হবে বলো ত,সবাই কতো চিনবে। আমি তো বুক বাজিয়ে বলবো আমার ইয়ে আমেরিকায় থাকে।

-         তো? আমি চলে গেলে তোমার মন খারাপ হবে না? তোমরা তো এখানে একা হয়ে যাবে,তোমাদের কে দেখবে?

-         আরে বাবুমশাই,আমাদের কিচ্ছু হবে না। আমরা ঠিক থাকবো। আর মন খারাপ হলে তোমার কাছে চলে যাবো হুস করে। J এবার লক্ষ্মী সোনার মতো ব্যাগটা গুছিয়ে নাও তো।

-         কেন পাঠাতে চাইছো আমায়? আমি কি এতই বোঝা হয়ে গেছি?

-         সশশশ…খবরদার এসব কথা বলবে না। আই লাভ ইউ…

সেই রাতের কথা বার্তার কটা দিন পরই কাকু প্লেন ধরেছিলেন আমেরিকার। কিন্তু সেই প্লেন আর মাটি ছুঁল না। কাকিমার মুখের হাসিটা মুখেই মিলিয়ে গেলো। কাকু চলে গেলেন,ফেলে রেখে গেলেন বেশ কিছু সম্পত্তি,অনেক সমবেদনা,একটা সদ্য বাড়তে চাওয়া সংসার।

                                    শুরু হল এক নতুন সংগ্রাম…

            কাকিমা বাপের বাড়ি ফিরে যেতে চান নি। আসলে প্রথম জীবনে প্রেম করে বিয়ে করাটা কে কেউই মেনে নিতে পারেন নি বলে তাকে বের করে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে। সেই থেকেই চাপা অভিমান জমে আছে মনের মধ্যে। কাকু মারা যাওয়ার পরও কাকিমা সেটা আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছিলেন। সাথে ছিল সু। সু কে ঘিরেই বেড়ে উঠেছিল কাকিমার সাজানো বাগান। টাকা পয়সা নিয়ে অভাব কখনও তেমন ভাবে একটা বোধ করেন নি কাকিমা। কারন কাকুর উপার্জন বেশ ভালো মতই ছিল,কিন্তু ওই যা হয়,একটা রানিং ইনকাম না থাক্লে।তাই খুব বেশি বেগ পেতে না হলেও বেস ভালো ভাবেই কাটত। কাকিমা বেশ শিক্ষিত ও ছিলেন,তাই পাড়ার ওই কটা ছেলে মেয়ে কে পড়িয়ে বেস কিছু টাকাও আসতো আর সময়্টাও কেটে যেত। আর সব থেকে বড় ব্যাপারটা হল কি সু সরকারি স্কুলে পড়তো। তাই পড়াশোনার খরচা ছিল না বললেই চলে। আর তা ছাড়াও তখন কার দিনে এই সব কোচিং ক্লাসের এতো মাতামাতি শুরু হয় নি। স্কুলের স্যারেদের মধ্যে যথেষ্ট আন্তরিকতা তখনও বর্তমান ছিল। তাই ওই টিউশান যাওয়ার ব্যাপারটা প্রায় ছিল না বললেই চলে। খরচা ও কম। এই করেই কেটে ছিল অনেক গুলো বছর।

            সুজয় কোলকাতার একটা নাম করা সরকারি স্কুলে পড়তো। আচ্ছা নামটা বলেই দি। সুজয় হিন্দু স্কুলের ছাত্র ছিল। সব সময় ফার্স্ট না হতে পারলেও প্রথম পাঁচের বাইরে যায় নি কখনও সুজয়। স্কুলের সব টিচার তাকে খুব ভালোবাসত। সেটাই স্বাভাবিক অবশ্য। শুধু এটাই না। সে সমস্ত স্কুলে খুব ফেমাস ছিল। কারনটা তাহলে বলা যাক। এ হেন কাজ নেই যেটা সুজয় করতে পারত না। পড়াশোনা না হয় বাদ দেওয়া গেলো। পড়াশোনা ছাড়াও ছবি আকা,ছবি তোলা, কবিতা লেখা,গান লেখা,নাটক লেখা,অভিনয় সব কিছুতেই সে সিদ্ধহস্ত। ছবি আঁকার হাতটাতো দারুন ছিল। বেশ কয়েকবার বড় বড় জায়গায় প্রদর্শনীও হয়েছিল ওর। শুধু এই না। অত্যন্ত দায়িত্ববান ছেলে হিসেবেও ভীষণ নামডাক তার। কারও মাথা ফেটেছে সুজয় কে ডাকো,ওই দিন এই প্রোগ্রাম হবে,নাও সুজয়কে ডাকো। মানে সহজে বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না একদমই যে সুজয় কতটা ফেমাস ছিল স্কুলে। পড়াশোনায় তো একটা প্রাইজ তার বাঁধা। প্রতি বছর কিছু না কিছু বিষয়ের জন্যে সুজয় প্রাইজ পাবেই। স্কুলের গর্ব হিসাবে সুজয়কে দেখত সবাই। আমরা সবাই ওর স্কুলের বন্ধু,আমরাও ওর পাসে থেকেছি,কিন্তু কখনও কেউ খেয়ালই করেনি। আসলে সূর্যের পাশে ১০০,২০০,১০০০ যত ওয়াটের আলোই লাগানো হোক না কেন সেগুলো ম্রিয়মাণই লাগে। আমরা সবাই সুজয়ে আলোয় জ্বলতাম, ওর ছায়ায় নিভতাম। সবার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতাম আর বুকটা কেমন আনন্দে ভরে যেত। সুজয় আমাদেরই বন্ধু যে,। J 

                                                                       


                                                           


                                                                        তিন



ফ্লোরিডা,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাত পেরিয়ে...


            সেদিন রাতে সুজয়ের আর ঘুম হয়নি। না হওয়াটাই স্বাভাবিক। মা ওদিকে আই.সি.ইউ তে আর ছেলের চোখে ঘুম যে আসবে না সেটাই কাম্য। বাড়ির ওই বারান্দাটায় শাটার দেওয়া জানলাটায় মাথা রেখে সারা রাত কি সব ভেবে গেছে সুজয়। ভাবতে ভাবতেই চোখের পাতা গুলো ভারি হয়ে কখন যে একে অন্যও কে আঁকড়ে নিয়েছে সেটা বোঝাও যায় নি। শাটারের উপর মাথাটা আস্তে করে জায়গা করে নিয়েছে। ওই শাটারের অপার দিয়েই সারা রাত বয়ে গেছে কতো জল। সারা রাত ধরে বৃষ্টি হয়েছে বাইরে। সুজয় বুজতেও পারেনি। বৃষ্টির আওয়াজ সুজয়ের হৃদয় বিদীর্ণ করে মনের গহীনে প্রবেশ করতে পারেনি। হা সুজয় কেঁদেছে। চোখে জল কতোটা এসেছে সেটা তো বুঝতে দেয় নি,উদাসিনতা দিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু হৃদয়টা যে কেঁদেছে সেটা বুঝতে পারা যায়।

            ঘুম ভাঙলো ওই ভোরের দিকটায়। সময়টা মনে নেই। চোখ খুলেই দেখলো বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ওই সময় ফ্লোরিডা তে এরম বৃষ্টি কিন্তু হয় না। খানিক অকাল বর্ষনের মতো। মনটা কু গেয়ে উঠলো। ভারতীয় সমাজে শিশুদের শিক্ষা হোক আর নাই হোক মনের মধ্যে কুসংস্কারটা কেমন করে জানি জন্ম নিয়ে নেয়। তার পর মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে সুজয়। এসব জিনিসের প্রতি বিশ্বাসের থেকেও ভয়টাই বেশি। সুজয়ও ব্যতিক্রমী না। চেস্টা যে একান্ত করেনি তা নয়, কিন্ত ওই যে “যাহা প্রোথিত আছে মনের গহীনে তাহাকে এতো সহজে দূর করিবে কেমনে? “ তার পর প্রিয়জনের কিছু হলে সেখানে তো আর কোনও কথাই নেই। মানুষ কেমন ভাবে যেন আরও দুর্বল হয়ে যায়।

            সারা রাত জানলা খোলা ছিল, ঝাপটা এসে কিছু কিছু জিনিস ভিজিয়ে দিয়েছে। আর মেঝেটাও জল থই থই করছে। চোখ খুলেই এরম অবস্থা দেখে সুজয় যে খুশি হবে না সেটাই স্বাভাবিক। আস্তে আস্তে উঠে সেই জল গুলো কে মুছলো সুজয়। তার পর ভিজে জিনিস গুলো কে শুকনো করতে দিতে গিয়ে সুজয় দেখে ওর মাথাটা কেমন ভার হয়ে রয়েছে। সারা রাত ঘুম হয়নি,তার পর নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই হয়তো শরীর খারাপ। বেশিক্ষণ টানতে পারলো না এই ভাবে। সুজয়ের খুব ঘুম পাচ্ছিলো, কিন্তু শুতেও মন চাইছে না।আবার শরীরটাও দিচ্ছে না। এই দোটানার মধ্যে সুজয় ঠিক করলো একটু শুয়েই নেবে। নাহলে সারা দিন কোনও কাজ হবে না। বিছানায় গিয়ে আস্তে করে শুয়ে পড়লো ও। আলো গুলো জলছে। না না ভুল বললাম,বারান্দার আলোটা জলছে। ঘরে ওই ফুটল্যাম্প টাকে জ্বালিয়ে ওই একটা অন্ধকারের মাঝে ঘুমিয়ে গেলো সুজয়। সব নিস্তব্দ। নীরবতাটা আজ কেমন যেন কুরে কুরে খাচ্ছে, কাঁদাতে চাইছে। অসহ্য হয়ে উঠছে এই নীরবতা। বাইরের বৃষ্টির ফোঁটা গুলো একে একে প্রহর গুনে চলেছে, নীরবতায় ছেদ পড়ছে।

                                                            টুপ্‌…টুপ্‌…টুপ্‌… 


(এরপর চলছে...) 


(বাকি অংশের জন্যে চোখ রাখুন এই ব্লগের ওপরে। পরবর্তী পর্ব আসতে চলেছে কিছু দিনের ভেতর। যেহেতু এটি একটি অসমাপ্ত লেখা তাই কোনও নামকরন করতে পারলাম না, দুঃখিত) 

নশ্বর

আমি জানি নশ্বর আমি; একটা একটা দিন ফুরায় আর আমি গুনি; এই বুঝি বাজল সাইরেন; শরীরের কারখানায় যখন ধীরে ধীরে কর্মবিরতি আসতে থাকে হঠাৎ করেই একদিন ...