যাত্রা শুরু...
ট্রেনে করে যাওয়া একপ্রকার আর হয়ই না। কর্পোরেটের গুঁতোয় সকাল সন্ধ্যে নিশ্বাস নেওয়াটুকু ছাড়া একটু এদিক অদিক যে যাব সেই উপায় নেই। হপ্তান্তে গাদা খানেক মেসেজ আসতে থাকবে,"ইয়র টাইম-shit ইজ ডিউ" বা সিটু ভর, এইসব। হ্যাপা এড়াতেই ওসব ধার না ধেরে সোজা প্লেনে চেপে বসি। একটু জ্বালা ধরানো দামটা নেয় বটে, বাট একদম ঝাক্কাস সার্ভিস। সময়টা অনেকখানি বাঁচে বলেই এসব করা। প্লেন আর ট্রেনের মধ্যে কিছু বেসিক তফাত আছে। মানে আকাশে ওড়া আর মাটিতে চলা বাদ দিয়ে, ওসব ক্লাসটেস্টের খাতার উত্তর। আমি বলছি এগুলো ছাড়াও, আছে কিছু। প্লেন হল রয়্যাল ফ্যামিলির ডিনার টেবিল। সেট অফ মেনু আছে, কিছু লোকও আছে, চাইতে পেয়ে যাচ্চেন। আর ট্রেন হল মধ্যবিত্ত ঘরের ডিনারের মত। সবাই মিলে বসে এক সাথে খাওয়া দাওয়া। আলাদা একটা ভালোবাসা আছে। সে যাই হোক পাশের লোকের সাথে আড্ডা জমিয়ে বেশ ভালভাবেই সময় কেটে যায়। আমি ট্রেনে চড়তে খুব ভালবাসি। জানলার ধারে বসে হাওয়া খেতে খেতে চলমান গাছ পালা গুলো কে পিছনে এগিয়ে যাওয়ার ভাললাগাটা পয়সা দিয়ে কেনা যায় না। আমিও তাই সেই ভালোবাসার টানেই চলেছি আমার মেহেবুবের কাছে, তাজমহল।
বিয়ের পর মা বাবা ঘুরতে গেছিলো আগ্রা। তাজমহল তখন থেকেই ছবিতে দেখে যাচ্ছি আর আড়ালে প্রেম জমাচ্ছি। কাছে যেতে চেয়েছি বারে বার,কিন্তু যাওয়া হয়নি। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই দুজন দুজন কে কাছে ডেকেছি। এবার মিলবো। দিল্লি ঘুরে মানালি যাওয়ার আগে টুক করে একটু দেখা করে আসার প্ল্যান বানিয়ে ফেললাম। সব প্ল্যান জমিয়ে এবার যাওয়ার পালা। আই.আর.সি.টি.সি-র ওয়েবসাইট খুলে খটা খট লিখে টিখে তিনটে টিকিট বুক। আমি ছাড়াও দুই অধমও যাবে আমার সাথে। এবার পালা অফিস সামলানোর। প্রায় দু তিন মাস আগে একটা মেল ঠুকলাম, 'এত থেকে এত দিন অব্ধি ছুটি চাই'। মেল যেই না পাওয়া, টুক করে ডাক পড়লো কেবিন ঘরের থেকে।
- এতদিনের ছুটি কেন চাই?
- বেড়াতে যাচ্ছি।
- আচ্ছা, তা বাকিদের সাথে আলোচনা করেছিস?
- হ্যাঁ। সবাই কে জিজ্ঞেস করেই প্ল্যান করেছি আর কি।
- দেখ, ফ্র্যানকলি স্পিকিং আমার কোন আপত্তি নেই এই ছুটি নেওয়া নিয়ে। তোর ছুটি তুই নিবি। কিন্তু তুই তো জানিস তুই একজন গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স। কিছু আরজেন্ট কাজ এলে তোর এই ছুটি বাতিলও
হতে পারে।
- হুম।
মনে মনে প্ল্যান করেই নিলাম, আর অপেক্ষা না। ছুটি না পেলে শালা ভুঁয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট লিখিয়ে হলেও আমি যাব।
নতুন করে বাঁশ বাগান গোছের কোন কাজ আসেনি আর, আমি ও মহানন্দে; সিক লিভ গুলো বেঁচে যাওয়ার জন্যে। যতদিন আসছে তত আনন্দ বাড়ছে। শেষ দুদিন তো ভালো করে কাজই করতে পারলাম না। অবশেষে ২৩শে মার্চ, আমাদের যাত্রা শুরু। অফিস করে হুড়মুড় করে অফিস বাসটা ধরলাম। বাস ছাড়া থেকে খুশীর শেষ নেই আর, রাত সাড়ে এগারোটা যেন মনে হচ্ছে শত আলোকবর্ষের দূরে। পাশের সিট থেকে একজন বললো,"এত ফুর্তি কিসের?" আমিও মুখ ফস্কে বলে ফেললাম,"ডেটে যাচ্ছি।" শুনেই সে আমায় একটু মেপে নিয়ে বললো,"তাই নাকি! কোথায়?" ইতিমধ্যে আমি বুঝে গেছি যে একটা আলটপকা কথা বলে ফেলেছি। তাই ছাড়া সুতো গোটাতে একটা ব্যর্থ চেষ্টা করে বললাম," আসলে আজ বেড়াতে যাচ্ছি। তাই আর কি..." কিছুটা ভাবলেশহীন হয়ে প্রশ্ন করে বললো," কোথায়?" উত্তর এলো,"আগ্রা"। "অ আচ্ছা। তা কত দিনের ছুটি মারলে?" এবার কেমন যেন একটা প্রাউড ফিলিং মন থেকে বেরিয়ে এলো। কলার তোলাটা নেহাতই আনপ্রফেশানাল হয়ে যাবে তাই, নাহলে ওটা তুলেই উত্তর দিতাম,"১০ দিন"। উত্তরটা পেয়ে কোমাতে চলে না গেলেও মনে মনে যে একদম খুশি হতে পারলেন না সেটা পরিষ্কার বোঝা গেল। অত্যুতসাহী কথোপকথন কেমন যেন চেন টেনে থামিয়ে দেওয়ার মত থেমে গেল। "ও আচ্ছা, ভালো।" এটাতেই কথার শেষ। আর একবার ফিরেও তাকালেন না পুরো রাস্তা। নামার আগে অন্য এক দাদা এসে সিমরান জি লে আপনি জিন্দেগি মার্কা ডায়লগ দিয়ে যেতে ওনার সর্বাঙ্গ যে জ্বলে গেছে সেটা বুঝতে টি এম সি থুড়ি বুদ্ধিজীবি হতে হয় না। বাস থেকে নেমেই চোঁ চাঁ দৌড় বাড়ির দিকে, পাক্কা নটায় বাড়িতে। চোখের নিমেষে বাকি মাল পত্র গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আর কিছুক্ষনের অপেক্ষা। তার পরেই সেই মধুর মিলন। গুরুজনদের আশীর্বাদ নিয়ে গুটি গুটি পায়ে বাড়ি থেকে বের হলাম ওই দশটা পয়ত্রিশ নাগাদ। মিনিট পাঁচেক দেরি হয়ে গেল। আসলে তেত্রিশ কোটি দেবতা দের সাথে লিংক করে বেস্ট উইশ রিসিভ করতেও তো বেশ খানিক টাইম লাগবে, তার ওপর জিওর যা অবস্থা, আরো সময় লেগে গেল। তো সে যাক গে, সময় মত স্টেশানে এসে দেখি একদম ঠিক টাইমে আছে ট্রেন। ১১টা ৪০; সব মায়া পিছনে ফেলে যাত্রা শুরু যোধপুর এক্সপ্রেসের। এক অন্য রকম ভালোলাগা কে সাথে নিয়ে স্টেশান ছাড়লো ট্রেন। আমরাও চললাম। আপাতত এই কটা দিনের জন্যে মুক্তি। টা টা....
দারুন । মেহবুবাকে দেখতে গিয়ে ফালতু কোনো গাইডের চক্করে পড়িস না । আমরা পড়েছিলাম একটা ঠগবাজের চক্করে
ReplyDelete