Sunday, 5 February 2017

… এবং ঈশিতা

        



             ব্যাগ পত্তর গোছানো মোটামুটি শেষ এবার শুধু প্রহর গোনার পালা কে কোথায় যাচ্ছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ারই কথা আসলে সাবর্ন্য চলে যাচ্ছে কোলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোর কাজের সুত্রেই যাচ্ছে নয় নয় করে এক দু বছরের ধাক্কা কিছুটা যেন মুক্তিও পাচ্ছে বলে ছাপ পড়েছে চোখে মুখে মন খারাপের লেশমাত্র নেই মুখে মা বাবার একটু কষ্ট হচ্ছে তবু সাবর্ন্য তাদের এই বলে বোঝাচ্ছে যে বাইরে অনেক সুযোগ কোলকাতায় থাকলে আর বড় হতে পারবে না এই বুঝেই ছেলের মুখ চেয়ে কষ্ট গুলোকে হজম করে নিচ্ছেন কাকু কাকিমা এই বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি আজ থেকে না বেশ কতা দিন ধরেই চলছে তাও হপ্তা খানেক তো বটেই নিজে হাতে লিখে লিখে একটা চেকলিস্ট তৈরি করেছে নিজে হাতে বাজার থেকে কিনে এনেছে ব্যাগে ভরেও নিয়েছে সময় সময় করে বাকি জিনিস গুলো মায়ের ডিপার্ট্মেন্ট বার দুইয়েক মিলিয়েও নিলো লিস্ট দেখে  তাও কেমন যেন মনটা খচ খচ করছে কিছু যেন একটা বাদ পড়ে যাচ্ছে বার বার লিস্ট মিলিয়েও কোথাও যেন বাকি রয়ে যাচ্ছে সেই অধরা জিনিসটা খুঁজতে চাইছে কিন্তু পাচ্ছে না অবশেষে ধরা পড়লো ঈশিতা





        ঈশিতাকে মনে পড়ে তো?? এই তো কটা দিন আগেই, পুজোর খানিক আগে আগে সাবর্ন্য আর ও একসাথে গড়িয়াহাট গেছিলো সে আর এক কান্ড ঈশিতা আসলে সাবর্ন্যর কলেজের জুনিয়র তাই কলেজের সময় থেকেই বেশ ভালো মতই আলাপ চারিতা ছিলো ওদের মধ্যে সাবর্ন্য তখন কলেজের বেশ পরিচিত নাম আর এমনিতেই সাবর্ন্য ভীষণ মিশুকে তাই বন্ধু বান্ধবের অভাব বিশেষ হয় নি কখনই ঈশিতার সাথে আলাপ ও অনেকটা সেভাবেই প্রথম প্রথম কোনও পড়া আটকে গেলে সাবর্ন্য দার কাছে দেখতে আসা থেকে শুরু, তার পর অনেক অনেক কাছের হয়ে গেছে ঈশিতা কতোটা কাছে সেটা হয়তো বলা মুশকিল কিন্তু তবুও বেশ কাছের,বেশ বেশ কাছের প্রেম ভালোবাসা কিনা আলাদা করে হয়তো বলা সম্ভব না,কিন্তু বন্ধুত্তটা এখনও বেশ অটুট কমিট্মেন্ট এর ভয়টা হয়তো কেমন একটা অদৃশ্য পাঁচিল তুলে রেখেছে ওদের মধ্যে যে পাঁচিল টপকানো তো যায়, কিন্তু কেউই টপকাতে সাহস পায় না

        সময়টা ওই আগস্ট মাস করে বেশ কটা বছর আগের কথা সাবর্ন্য তখন থার্ড ইয়ারের শুরু শুরু কলেজ ক্যান্টিনের দাঁত বেরোনো ইঁট গুলো প্রায় মুখস্তের মতো করে ফেলেছে ওর নাম কলেজ ক্যান্টিনের একটা খুব বাজে অভ্যাস আছে একবার যাওয়া শুরু হলেই কেমন যেন নেশায় পৌঁছে যায় এক অদ্ভুত নির্ভরতা জন্মে যায় ওই ছোট্ট জায়গাটাকে জুড়ে পরিচিতআঁতেলগোষ্টীর সেই লম্বা চওড়া আলোচনার এক অন্যতম অঙ্গ সাবর্ন্য তো সেদিন ,দিনটা সেভাবে মনে নেই তবে এটুকু মনে আছে বেশ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছিলো বরুন দেবের ইচ্ছামৃত্যুর আগে একটা জোর কামড় দেওয়ার মতো ব্যাপার আর কি তা আঁতেল গোষ্ঠীর সেই আড্ডায় সাবর্ন্য এসেছে, বরাবরের মতো দেরি করে বেশ ভিজেও গেছে বেশ একটা রাগের বলয় ঘিরে রেখেছে তাকে ক্যান্টিনে ঢুকেই দড়াম করে টেবিলের ওপর ফেলে দিলো একটা ফাইল ফেলে দিলো বলা ভুল, ছুঁড়ে দিলো সবার চোখ কপালে, ভাবলেশহীন একটা ব্ল্যাঙ্ক চাহনি,

-         ধুর শালা, এভাবে কাজ করা যায় নাকি…!!

-         কেন? কি হলো আবার?

-         কি আবার হবে, ওই শালা রেজিস্টার কোনও কাজ করতে দেবে না কোনও কাজ না

-         কেন আবার কি করলো মাল টা?

-         আরে এবার কালচারালে আমার নাটকটা করবো বলেছিলাম তাতেও শালার আপত্তি (গরররর…)

-         কোনকোন নাটকটা?

-         আরে আমি যেটা লিখেছিলাম ফেমিনিসমের ওপর, ওটা নিয়ে

-         ফেমিনিসম নিয়ে তো এই সেদিন থেকে একটা লিখতে শুরু করেছিস, এর মধ্যে শেষ হয়ে গেলো ওটা?

-         আরে না না আমার ওই নাটকটার কথা বলছি, “ পলিটাকালি কারেক্ট

-         ওহ্ ওটা আর ফেমিনিসম হলো কই? ওটা তো পলিটিকাল নাটক

-         রাসকেল, নাটক বুঝিস? দু চারটে খ্রিষ্টফার নোলান দেখে বেশি বুকনি মারতে আসিস না

-          তুই তো শালা সব বুঝিস? কি ভাবিস নিজেকে?

-         তোর থেকে বেশি বোদ্ধা ভাবি নিজেকে। শালা...

-         এই ছাড় না,কেন এভাবে নিজেদের মধ্যে বচসা করছিস? এই দেবু তুই চুপ কর। এই সাবু তুই ও। নিজেদের মধ্যে এসব বাওয়াল না করলেই না কি?

-         আমি তো কিছু বলি নি। সাবুই তো...

-         সাবু করলো মানে...তুই কিছু বলিস নি আমায়?? ধোওয়া তুলসি পাতা নাকি তুই?

-         চুপ করবি কি তোরা????

ব্যাপার স্যাপার বেশ গরম হয়ে উঠছে দেখে থামিয়ে দিতে বাকি রা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে ।তবুও চাপানোতর একটা চলেই যাচ্ছে। যথারীতি বেলাইন ট্রেন কে লাইনে ফিরিয়ে আনতে সবাই হাতে হাত লাগালো। ইতিমধ্যে গরম গরম শিঙ্গাড়া আর ধূমায়মান দুধ চা, আর টিনের চালে ”রিম ঝিম গিরে সাওয়ান...” আহহ্‌। একদম আড্ডা জমে গেছে। ওসব মান অভিমান এখন ছুটিতে। J

            ওই ধোঁওয়া ওঠা কাপের ওপারেই প্রথম দেখা ঈশিতাকে। এক ঝলকে চোখে পড়ার মতই বলা যায়। খুব একটা লম্বা না বা চোখ ঝলসানো রূপসীও না, তবুও কেমন যেন একটা ভালো লাগা আছে এর মধ্যে। তবে চোখের কাছে তো হার মানতেই হলো শেষমেষ। প্রথম দিনে এত কিছু দেখার সুযোগ পায়নি সাবর্ন্য। শুধু একটা বৃষ্টিভেজা মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেছিলো সেদিন। বাকি সময় সিঙ্গাড়ার ঝাল আর বাকি দের কথার মাঝে হারিয়ে গেছে। কথা গুলো আর নেই, কিন্তু সেই প্রথম দেখাটা , সেটা রয়েই গেছে। বার বার ওই ক্যান্টিনে এলেই কেমন যেন মনে পড়তে থাকে সাবর্ন্যর। একবার জিজ্ঞাসা করায় কেমন তোতলা ভঙ্গিতে এড়িয়ে গেছিলো, সদুত্তর দিতে পারেনি কোনো। বন্ধু মহলে রীতিমতো সরগোল পড়ে গেছে। কিন্তু সাবর্ন্য কেমন যেন এড়িয়ে যাচ্ছে।  কারন হয়তো একটাই, সুতনুকা  

            বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে গেলে এর একটা হদিশ পাওয়া যাবে। ওই ক্লাস ইলেভেন-টুয়েল্ভ হবে। ছেলেদের এই বয়সটা খুব খারাপ। মনে খালি উড়ি উড়ি যাইভাব, মানে দু চারজনকে বাদ দিলে গড়পড়তা সব ছেলেদের এই এক অবস্থা। অপরিণত বয়সের হাতছানিতে মেজর কেসেই গুলিয়ে গ, সাথে সাথে হায়ার সেকেন্ডারিটাও জলে। তো সেরকম সময় থেকে,মানে পেছন পাকার শুরু শুরুতেই চোখে অনেক মেয়ের ছবি ভাসতে শুরু করেছে সাবর্ন্যর। স্লাইড-শোয়ের মতো সরে সরে শেষমেষ আটকালো সুতনুকাতে। কেমিস্ট্রির অরগানিক কম্পাউন্ডের সাথে সাথে নিজেদের মধ্যেও ট্রাইট্রেশান করতে মত্ত তখন সাবর্ন্য। শেষপর্যন্ত অনুঘটক ছাড়াই যখন বিক্রিয়া শেষ হলো তখন আর দেখে কে... আপনা আপনা কলারে হাত চলে গেছে। সব মিলিয়ে গুলিয়ে টুয়েল্ভটা কোনো ভাবে সামলে নিয়ে দড়াম করে মুখ থুবড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দোরগোড়ায় দুজনে পড়লো। একজন কলকাতা, আর একজন ব্যাঙ্গালোর। অনেক দূর। টাকার জোর থাকলে আড়াই ঘন্টা, না হলে তিরিশ ঘন্টা। আর পকেট যদি রেস কোর্সের মাঠ হয় তাহলে টাটা ডোকোমোর শরনার্থী, ২৬ টাকায় পনেরো হাজার মেসেজ। ‘গুড মর্নিং’,’কি করছে আমার বাবু/পুচুটা’ এসব দিয়ে শুরু করে ‘হুম’,ঘুম পাচ্ছে’,’কাল কথা বলবো’, লাভ ইউ’ কোনো কিছুই বাদ নেই আর। ২৬ টাকা যোগাড় হয়েই যেতো এদিক অদিক থেকে। তাই অপরিনত প্রেমের নৌকা তরতরিয়ে চলতে শুরু করলো। উচ্চ মাধ্যমিক অবধি হাতে তো আর মোবাইল আসেনি, তাই ঘরের কোনের ল্যান্ডলাইনটাই তখন লাইফ লাইন। ফাঁকা বাড়ি পেলেই দেদার ফোন আর মাসের শেষে অমায়িক ভাবে বি.এস.এন.এলের ঘাড়ে দোষ চাপানোটা প্রায় একটা রীতিরেওয়াজ হয়ে গেছিলো সেই সময়ে। কেমন নির্বিকার চিত্তে মিথ্যে বলে যেতো ছেলেমেয়ে গুলো সেগুলো ভাবাই বেশ দুঃসাধ্য। মানে মিথ্যে কমে গেছে সেটা বলিনি,বরং বেড়েছে; দুঃসাধ্য ব্যাপারটা হলো ওই অমায়িক চেহারা গুলো। যাকগে যাক সে থাক, তো সাবর্ন্যও খুব একটা সাধুপুরুষ না। সেও সেম চটিটাই পায়ে গলিয়েছে। কলেজে গিয়ে হাতে একটা নতুন ফোন এসেছে, পয়সা কিভাবে ভরবে সেই চিন্তা নেই অথচ প্রেমের ফোয়ারা চলছে, সাথে আবার লুকিয়ে লুকিয়ে এস.টি.ডি কল। মানে প্রেম আর রাখে কে, এদিক অদিক থেকে ঝোরে ঝোরে পড়ছে। দিন গড়াতে লাগলো, আস্তে আস্তে প্রেমের তেজও কমতে লাগলো। থার্ড ইয়ারের কাছাকাছি এসে প্রেম কমলো অনেকটাই, পড়ে থাকলো অভ্যাস। দুজন এখন দুজনের ভালোবাসা না, অভ্যাস।

         লং ডিসট্যান্ট রিলেশানশিপ এমনিতেই অনেক সমস্যার। তার সাথে স্কুললাইফের হলে তো আর কথাই নেই, উপরি ঝামেলা এসে যায়। আসলে বয়সের পরিনতির সাথে সাথে নিজেদের ভুলগুলো আস্তে আস্তে চোখে পড়তে থাকে। এখানেও পড়েছে, তাই মোহ,মায়া আস্তে আস্তে কমে গেছে দু তরফ থেকেই। আসলে বড় হলে বিচার বুদ্ধি যেমন বাড়ে,তেমনই অনেক নতুন জিনিসের ব্যবহারযোগ্যতাও বাড়ে। আর এখান থেকেই সংঘাত শুরু। আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত প্রেমের মতো এই প্রেমের সংঘাতও শুরু একই ভাবেই। এখন ওয়াটস্যাপ আছে, মেসেজের আর দরকার হয় না তেমন। সেখানেও বেশি কথা চালাচালি হয় না, মাঝে মাঝে একটু ফোনে কথা, এইটুকুই নতুন প্রযুক্তির দরুন মানবিক সম্পর্কগুলো কেমন যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। রোজ রোজ ঝগড়া, আর কথা কাটাকাটিতো একটা নতুন ফ্যাশান হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক যখন এরম ডামাডোলের বাজার,ঠিক সেই সময়েই প্রথম দেখা ঈশিতাকে। মুখে না বললেও, মনে মনে যে সাবর্ন্যর ও কে ভালো লাগতো সেটা আর অপেক্ষা রাখে না বলার। কিন্তু ওই যে পুরোনো অভ্যাস, সেটা না পারছে ছাড়তে, না পারছে টানতে। তাই নিজেও পুড়ছে, সুতনুকাও পুড়ছে।

        নয় নয় করে বেশ কদিন চলার পর, ফোর্থ ইয়ারের শেষের দিকে ইশিতার সাথে বেশ ভাব জমিয়ে ফেললো সাবর্ন্য। মানে ক্যান্টিনে বসে গল্প করা, লাইব্রেরিতে পড়ানো, সব জায়গায় বেশ ঘনঘন দেখা যেতো দুজন কে।  আর জুকেরবার্গের কল্যানে কলেজের গন্ডি ছাড়িয়েও বাইরে ছড়িয়ে পরতে শুরু করেছে “বাজিরাও-মাস্তানির” প্রেমের এই হাল আমলের ভার্সান। না প্রেম না, এটা নিছক ভালোলাগা। কিন্তু লোকে মানলে তো। যথারীতি ফেসবুকময় ছবি, লুকিয়ে চুরিয়ে তুলেছে কলেজের বন্ধুরা,আর ধরে ধরে পোস্ট। ব্যাস আর রাখে কে, একে মা মনসা তার ওপর ধুনোর গন্ধ। একদিন মাঝরাতে,ওই ১২টা-সাড়ে ১২টা করে ফোন,
-         তোর ফেসবুকের পাসয়ার্ডটা একটু দে তো।

-         কেন?

-         আমার লাগবে, দে না।

-         আগে বল কেনো?

-         আজ কাল তোকে এত কিছু বলে চাইতে হবে পাসয়ার্ড, আমি চাইছি তাই দিবি ব্যাস।

-         না, আগে কারন বল।

-         উফফ, এতো কৈফিয়ত দিতে পারবো না, দিবি হ্যাঁ কি না?

-         না, আগে কারন বল তবে। ওটা আমার পারসোনাল জিনিস, তোকে কেন দেব?

-         সেই, দিলে তো তোর সব নোংরামি ধরা পড়ে যাবে। তাই দিবি না। আমি জানি। ছাড় বাদ দে, আমি শুতে যাই।

-         ওয়াট ডু ইউ মিন? নোংরামি মানেটা কি?

-         সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি আর বয়স দুটোই আছে তোর। নাটক না করলেও হবে। (রেগে)

-         না আমি বুঝছি না, যা তা অ্যাকিউয়স করতে পারিস না এভাবে আমায়।

-         সেই,

-         কি সেই?

-         এই বড় বড় বুকনিগুলো কোথায় থাকে যখন কলেজের ক্লাস কেটে মাঠে ওই মেয়েটার সাথে বসে গল্প করিস। কি না কি আরো করিস সেসব তো আমি আর জানিতে পারছি না।

-         WTF… মানেটা কি? পরিস্কার করে বল।

-         খুব ভালো বুঝেছিস, আর নাটক করিস না।

-         ওকে, ফাইন। তুই যখন ওই ছেলেটার সাথে পাশাপাশি বসে ছবি তুলিস, রেস্টুরেন্টে এক সাথে খেতে যাস, একসাথে বেড়াতে যাস, তখন? সেগুলো কিছু না???

-         সাবর্ন্য, তুই খুব ভালো করেই জানিস যে ও আমার বেস্টফ্রেন্ড। তাই ওকে নিয়ে আমার সম্বন্ধে খারাপ ভাবা বন্ধ কর এবার।

-         তাহলে তুই কেন ঈশিতাকে আমার বেস্টফ্রেন্ড ভাবতে পারছিস না??

-         ওয়াও।  তাহলে আমি ছাড়াও তোর কোনো বেস্টফ্রেন্ড আছে...!!

-         বাহ, তোর থাকতে পারে, আর আমার থাকলেই দোষ?? আমার প্রশ্নের জবাবটা দে। কেন ভাবতে পারছিস না?

-         ঘুমাতে গেলাম, আমার আর পোশাচ্ছে না।

-         উত্তর নেই তোর কাছে, আমি জানি সেটা। বাই।

-         বাই

        কথা আদান প্রদান থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে বিশ্বাস কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে।এভাবেই কেটে গেছে অনেক দিন। সাবর্ন্য এখন কলকাতার একটা কোম্পানিতে চাকরি করে, সুতনুকাও মুম্বাইতে। পোশাকি “in a relationship” ট্যাগটা রয়ে গেছে, কিন্তু কোনো আকর্ষন আর বাকি নেই, সবটাকেই টেনে নিয়েছে কালের অন্ধকার। কোম্পানি থেকে পুনে পাঠাতে চেয়েছিলো, কিন্তু সাবর্ন্য বদলে নিয়েছে ব্যাঙ্গালোরে। সুতনুকাকেও কলকাতা পাঠাতে চেয়েছিলো, সেও দায়িত্ব নিয়ে বদলে নিয়েছে মুম্বাইতে। কাছে থাকার ঝক্কিটা আসলে যতটা কম নিতে হয়। এভাবেই এগিয়ে চলছে এই আধুনিক সম্পর্ক গুলো। ট্যাগটুকু ছাড়া আর কোনো ত্যাগ নেই। দিনে দিনে রুপ পাল্টাচ্ছে। আজকাল কার ভালোবাসাগুলো আসলে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা। একটুখানি সহানুভূতি, একটু খানি যৌবনতার ছোঁয়া, কিছুটা অভ্যাস আর অনেক খানি ইগো। ভালোবাসা খুবই কম, শুধু নিজেকে ভালো রাখা। সাবর্ন্য, সুতনুকাও এখন এই অভ্যাসকে সাথে নিয়েই চলছে। কতদিন এই বোঝা বইতে পারবে সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করলে আপনাকে ছোট ভাবার কোনো কারন কিন্তু নেই। অবাক লাগছে না, এই ভালোবাসাকে বোঝা বললাম বলে? আদতে সত্যিই এটা বোঝা। মনে নেই, ছোটবেলায় যখন বলতো প্রতিদিন এক পাতা করে ইংরাজি, আর একপাতা করে বাংলা হাতের লেখা “অভ্যাস” করবে, তখন কি বিরক্তই না লাগতো বলুন? লাগতো না?? যে ভালোবাসা দিনে দিনে অভ্যাসে পরিনত হয় তাকে বোঝা ছাড়া আর কিই বা বলবো বলুন? J

        ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার দিন এসে গেছে। শেষ কটা দিন বেশ ঘোরের মধ্যেই ছিলো সাবর্ন্য। ঘোর কাটলো ম্যানেজারের ফোনে। “কাল ভোর বেলা রেডি থেকো, আমি পিক করতে আসবো। ঠিক ভোর সাড়ে পাঁচটা। তুমি জানোই আমি কতটা পাংচুয়াল। শো, বি রেডি। J”  সময় মতো গাড়ি এসে গেছে। সাবর্ন্য চলে যাচ্ছে কোলকাতা ছেড়ে। আবার কবে আসবে জানা নেই। গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর পরই একবার পিছন ফিরে তাকালো। মা বাবা কে দেখে হাত নাড়ালো, আর উদাস চোখে গাড়ির লুকিং গ্লাসে চেয়ে থাকলো। হয়তো খুঁজছিল ফেলে যাওয়া অতীত, ফেলে আসা রাস্তা, পুরনো ল্যামোপোস্ট, ফেলে যাওয়া কলকাতা, হারানো ভালোলাগা

এবং ঈশিতা......... 
         








********************************** সমাপ্ত **********************************

2 comments:

  1. Bhison touching lekhata.. ghotona gulo nanan vbe amader jibone ghote thke..ank mil pelam..schl life thke college, job sab kichu incidents e vison chena othocho akta sundar feelings er modhye diye j lekha ta lekha seta mon chuye galo.. durdanto..all the very best :)

    ReplyDelete

নশ্বর

আমি জানি নশ্বর আমি; একটা একটা দিন ফুরায় আর আমি গুনি; এই বুঝি বাজল সাইরেন; শরীরের কারখানায় যখন ধীরে ধীরে কর্মবিরতি আসতে থাকে হঠাৎ করেই একদিন ...