Sunday, 17 June 2018

হ্যাঁ, আমিই DSLR





মহাভারতের যুগে দ্রৌপদী আর এখনের কালে ডি-এসেলার, এই দুটোর আর কোন মান ইজ্জত রইলো না। তখন দুঃশাসন আর এখন ইজি ইনস্টলমেন্টের অপশাষন, এই নিয়েই প্রায় ছারখার হয়ে গেল। ছিঃ ছিঃ ছিঃ, কোন ইজ্জত রাখল না আর। ওভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই, আমিই সে; ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্টার। ওহ বাবা, পুরো নামটাও জানে না অনেকে, আরে মশাই আমিই ডি-এসেলার। পার্কে, দোকানে, পুজোর আসনে, ঠাকুর ভাসানে, বিয়ের পিঁড়িতে, প্রেমের সিঁড়িতে সব জায়গায় আমায় পাওয়া যাবে। কালো হলুদ, লাল কালো আরো বেশ কিছু রঙ বদলের খেলায় আমায় পাবেন নতুন নতুন নম্বরে।



আপনি কি সিঙ্গেল?


১) অনেক দিন হয়ে গেছে, না মানে বছর ২৮-২৯? মাথার চুল গুলো কি পাকছে? চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত কিন্তু তাও কপালে মেয়ে জুটলো না? না মশাই, এটা একটা ভয়ানক সমস্যার কথা। তবে চিন্তা নেই আমি আছি। তার জন্যে একটা স্টার্টার কোর্স আছে। এনরোলমেন্টে হাজার পঁচিশ, তার পরে মাসে মাসে বেশ কিছু কিছু করে দিলেই আপনার জীবনের সমস্ত দুঃখ একেবারে শেষ। ফেসবুকে হাজার বার হাই লিখে উত্তর না পেয়ে, বারে বারে রিমাইন্ডার দিয়ে দিয়েও মেসেজ না দিয়ে শুধু একবার লিখে দিন ‘আপনাকে কি দারুন লাগছে। তবে আমার DSLR এ এর থেকে বেশি ভালো ছবি আসবে।’ ব্যাস পরের দিনেই দেখবেন লাইন লেগে যাবে মেসেজের। পরের পর মেসেজ এসে এসে কানের তালা না লাগলে কি আর বলেছি; এই শাটার স্পিডের দিব্বি।

২) ছবির ছ জানেন কি না জানেন লিখে তো দিয়েছেন। তাই স্টেজে মেক-আপ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সোজা ইউটিউব খুলে নিন, খটাখট করে টাইপ করে দিন, “ হাউ টু ক্লিক আ গুড পোট্রেট ইন ডি-এসেলার”। এন্টার মারলেই ঝর ঝর করে সব বেরিয়ে চলে আসবে। খান পাঁচেক ভিডিও দেখে নিন, তার পরে হাতে কলমে একটু প্র্যাকটিস। পাতে দেওয়ার মতো ছবি হয়েই যাবে। আর নাহলে মশাই কিছু করার নেই, স্রেফ আমার ওপর চালান করে দিন। বলে দিন ‘আজ ক্যামেরাটা সাথ দিচ্ছে না। কিছু গন্ডগোল হয়েছে। দোকানে দিতে হবে।’ এই সুযোগে আরেকদিন দেখা করার ব্যবস্থাও করেনিন।

৩) এর পরেও সিঙ্গেল থাকলে মশাই একটু হাত পাকাতেই হবে। বার বার কি ঢপ মেরে চলবে এসব। ব্যাপারটা খুবই সোজা, ভরসা ইউটিউব আর সেই প্র্যাকটিস। কথাতেই আছে প্র্যাকটিস মেকস অ্যা ম্যান পারফেক্ট। একটু হাত পাকিয়ে মাঠে নেমে পড়লেই বলে বলে গোল দেবেন। আসে পাসে কে কি ভাবছে অসব মাথায় নেবেন না, নিজের কাজ করে যান। এই গোল হলো বলে, অ্যাপারচারের দিব্বি।


এখনো ক্যামেরা নেই…!!! কি কিনবেন জানেন না???


নামি দামি মোবাইল আসার পর থেকে আজ কাল কার ছেলে ছোকরা গুলো আর পাত্তা দিতে চায় না। ভাবছে সস্তায় মেরে দেবে। কিন্তু বাওয়া অতই যদি সোজা হতো তাহলে এই শর্মা আর দুনিয়ার মুখ দেখতো না। পুজো প্যান্ডেল, খুব জোর হলে দীঘা, কি আর একটু টেনে দিয়ে পুরী, ব্যাস ওইটুকুই। তার পরেই তো মোবাইল ক্যামেরার দৌড় শেষ। পকেটে করে নিয়ে গেলেও বার বার মনে হবেই এতোটাকা খরচা করে এলাম আর একটা ক্যামেরা নিলাম না। এটা মনে হবেই। বাঙালী দার্জিলিং যাবে আর কাছে ক্যামেরা থাকবে না, এরম কি হওয়া সম্ভব…!!!

এসব থাক, এবার আসি ক্যামেরা কেনার ব্যাপারে। তবে আমি এটা নিয়ে ঠিক বলতে চাই না, বললেই হাতাহাতি হয়ে যেতে পারে। এই বাজাজ ফিনান্সের লোকগুলোকে আমি মেরেই দেব। লোন দিয়ে দিয়ে, লোন দিয়ে দিয়ে আমার ইজ্জত লুটে নিলো পুরো। মানে মান নেই, কূল নেই সবার কাছেই ডি-এসেলার। অর্ধেক লোকতো পুরো নামটাই বলতে পারবে না, কার্যপ্রনালী তো দুরস্ত। তবুও ‘বেড়াতে যাবো কি ক্যামেরা কিনি বল তো?’ এই প্রশ্নটা সব টুনটুনিওয়ালাদেরই শুনতে হয়। নিজের ব্যাপারে এর থেকে যথার্থ বাজারি নামকরণ করতে পারলাম না। মানেটা আশা করি বুঝেই নিয়েছেন।
ক্যামেরা হাতে নিলেই তো আর ছবি ওঠে না। তাই কিছু টিপস লিখে রাখুন, কাজে লাগবে।

১) ক্যামেরা কিনে নিয়েই অর্ধেক পথ পেরিয়ে গেলাম এই ধারনাটা বদলানো দরকার। চিত্রগ্রাহক হওয়ার আগে আপনি নিজে আসলে চিত্রমনস্ক কিনা সেটা বুঝে নেওয়া দরকার। লোক দেখানো ব্যাপার হলে কিছু না বলাই ভালো, তবে ডি-এসেলার যে বাড়ির ভ্যাকুম ক্লিনার না সেটার দিকে খেয়াল করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। গৌরি সেন কি সুদিপ্ত যেই থাকুন না কেন, হুপে পড়ে কিনে নিলেন তার পর ডজন ডজন ধুলো খাইয়ে লাং ক্যান্সার ধরিয়ে দিলেন ক্যামেরাটার, এটা কিন্তু আমরা আর মুখ বুজে মেনে নেব না।

২) কিছু কিছু প্রশ্ন এই টুনটুনিওয়ালাদের(পড়ুন চিত্রগ্রাহকদের) শুনতে হয়। “আচ্ছা ভাই/দিদি বিগিনার ডি-এসেলার বলতে কি কি সাজেস্ট করবি/করবে?” এটা কোন প্রশ্ন হল…!!! এভাবে আমাদের মধ্যে জাতপাতের লাইনটানার জন্যে আপনি কে মশাই। যে ভালো ছবি তোলার সে সব ক্যামেরায় ভালো ছবি তুলতে পারে, ওসব বিগিনার,সেমি বিগিনার, ইন্টারমিডিয়েট ট্যাগায় না। তাই ক্যামেরায় নজর না দিয়ে নিজের দক্ষতায় ভরসা রাখাটা বেশি জরুরী।

৩) ক্যামেরার মডেল তো জেনে নিলেন, কিন্তু তারপর? ছবিটা উঠবে কি দিয়ে? সেসব জেনেছেন? ও না। আপনাদের তো আবার স্টিরিওটাইপই আছে একটা কিট-লেন্স আর সাথে ‘ফিফটি- এম.এম প্রাইম’। আগে এই হুজুকটা এতো ছিলো না, ইদানিং যেন প্লেগের মতো ছড়িয়ে গেছে। এক একটা লেন্সের এক এক রকম কাজ। তাই কেনার আগের কিছুটা হোম-ওয়ার্ক করা বিশেষভাবে জরুরী। সবার আগে প্রয়োজন নিজেকে বোঝা, মানে কি রকম ছবি আপনাকে বেশি আনন্দিত করে। মানে কারো কাছে প্রকৃতিই সব, তো কারো কাছে অবয়ব। কেউ গলে বন্যদের দলে, কেউ মজে পাখির দলে। তো নিজের পছন্দ বিচার করেই লেন্সের দিকে হাত বাড়ানো উচিত। নাহল এরম হতেই পারে বন্যদের দলে ঢুকতে চেয়ে প্রান সংশয়, কারন হাতে ছিল ‘ফিফটি- এম.এম প্রাইম’।


ছবি তোলা শিখছেন? বাঃ সে ভালো কথা…


ক্যামেরা লেন্স, হাতে এসে গেছে; আর বাকিটুকুই আর পড়ে থাকে কেন। সব যোগাড় যন্ত্র করে নিয়েই মাঠে নেমে পড়া যাক। ছবি তোলা হয়তো সবার জন্মগত হয় না, কিন্তু অনেকে দেখে দেখেও শেখে। তো এই শেখার পথেই কিছু কিছু নমুনা দেখা যাক।

১) ক্যামেরাম্যান বললে বিশেষ সম্মানে লাগে তাই বলছি, যদি আপনি ফোটোগ্রাফার(Fotographer) হন,  তাহলে জীবনে একবার না একবার এই কথাটা শুনতেই হয়েছে যে, “ ভাই/দিদি, এই ঘরের মধ্যে ক্যামেরার সেটিংসটা কেমন হবে রে?” এই প্রশ্ন শোনা ব্যতীত আপনার ফটোগ্রাফিক যাত্রা অসম্পূর্ণ। বহুবার বলার পরেও এটা বোঝানো যায় না যে ফোনে এভাবে সেটিংস বলা সম্ভব না, সেই জায়গায় না থেকে কেউ কিভাবে জানাতে পারে যে ভালো ছবি তুলতে ঠিক কি সেটিংস করতে হবে। মানুষ কবে যে বুঝবে…!!!

২) এক বাঙ্গালীর গলায় জায়গা পাওয়ার জন্যে খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছি বেড়ে ওঠা। বাঙ্গালীর, বিশেষ করে কলকাতা বা তার আসে পাশের এলাকার চিত্রগ্রাহকদের যাত্রা শুরু হয় প্রিন্সেপ ঘাট বা ভিক্টোরিয়া থেকে। ভিক্টোরিয়ার মাথার পরিটা এতদিনে বাঁশির প্রায় সব সুর বাজিয়ে নিয়েছে কিন্তু বাঙ্গালির ছবি তোলার আর শেষ হয়নি। যদি কোন কলকাতাবাসী ফটোগ্রাফার ভিক্টোরিয়া না গিয়ে থাকে তাহলে আমি তাকে ফটোগ্রাফার বলে মেনে নিতে পারবো না।

আর প্রিন্সেপ ঘাটের রেল লাইনে কোন ছবি না থাকলে সে আর যাই হোক ফটোগ্রাফার হতে পারবে না।

৩) এই প্রিন্সেপ ঘাটের কথায় মনে এলো। আপনি কি কখনো প্রিন্সেপ ঘাট থেকে বসে সূর্যাস্তে দ্বিতীয় হুগলী সেতুর ছবি তুলেছেন? যদি না তুলে থাকেন তাহলে সত্বর চলে যান, নাহলে আপনার কৌলিন্যে কালি লাগতে পারে। এসব জিনিষ নিয়ে ছেলেখেলা একদম পছন্দ না আমার।

৪) ক্যামেরায় না তাকিয়ে শূণ্য দৃষ্টিনিবদ্ধ হলেই যে ‘আঁতেল’ হওয়া যায় এই ধারনাটা সবার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। আর সাথে সাথে আঁতেল হতে চাওয়ার ইচ্ছাটাও। তাই ক্যান্ডিডের চক্করে আপনার অম্লান বদনের হাসিটিকে বঞ্চিত না করাটাই হয়তো বেশি মাত্রায় বাঞ্ছনীয়। তাই ভাবনার ভারে মাথা না হেলিয়ে, না বাঁকিয়ে সোজা দৃষ্টিতে ক্যামেরায় তাকান, বেশি লাইক পাবেন। আর আঁতেল হয়ে কি ই বা লাভ…!!!

৫) ছবিটা সাব্জেক্টের কথা ভেবে তুলুন, ফটোশপের কথা ভেবে না।

একে রবিবার, তার ওপর হালকা হালকা হাওয়া দিচ্ছে, গরমটাও কম। আমার বাঙালি বাবু মটন খেয়ে দিব্যি ঘুম দিচ্ছেন বলে এতো কথা বলতে পারলুম, নাহলে তো এতক্ষণে বস্তায় বেঁধে কোন চুলোয় নিয়ে গিয়ে দেদার কান মুলছে আর খচাখচ করে চাঁটি মারছে, থুড়ি ছবি তুলছে। যা যা বললাম পড়ুন,জানুন আর সবাইকে জানান। আমাদের নিয়ে এসব দাবি আর সত্যিই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।



1 comment:

  1. ভাই যা বলেছিস!!! তোর বাঙালি বাবুর চক্করে পরে আমার উনি তো আমার জীবনটা হেল করে দিলো। এই গত কালের ব্যাপারটাই যেমন, হটাৎ বাড়ি ফিরে আমার গলায় ওই পঞ্চাশ মিলিমিটারি টা ঝুলিয়ে দিলো তার পর ঘরের সুইচ বোর্ডের দিকে তাক করে... কি বলবো ভাই তোর ভাষাতে ওই "চাঁটির পর চাঁটি"। মাস দুয়েক হলো আমার এক নতুন সতীন জুটেছে, তো উনি এখন হটাৎ বৃষ্টির অজুহাত দিয়ে সতীনের সাথেই উইক এন্ড টা স্পেন্ড করছেন... গা হাত পা জ্বলে যায় মাইরি। আমিও মাঝে মাঝে শোধ নি বটে... ঐতো সেদিন গোটা বিকালটা আমাকে খুঁচিয়েছে সতীনের একটা ভালো ছবি তুলে দেয়ার জন্য, কিন্তু আমিও তো তোর বংশেরই মেয়ে একটাও প্রপার ফোকাস করি নি 😂😂😂 এখন বুঝছে ঠ্যালা। যাই হোক যেটা বলতে এখানে আসা, তোর ওই বাঙালি বাবুর জন্য আজ আমার জীবনটা নষ্ট হয়েছে, তাই আমার উনি কে ক্যামেরা ম্যান হতে সাহায্য করবেন উনিই... কথাটা তোর বাবুকে বলে দিস। যাই এখন একটু জিরিয়ে নি, পরে আবার কথা হবে... টাটা ।

    ReplyDelete

নশ্বর

আমি জানি নশ্বর আমি; একটা একটা দিন ফুরায় আর আমি গুনি; এই বুঝি বাজল সাইরেন; শরীরের কারখানায় যখন ধীরে ধীরে কর্মবিরতি আসতে থাকে হঠাৎ করেই একদিন ...